১। প্রাণিবিজ্ঞান কাকে বলে ? এর জনক কে ?
উত্তরঃ প্রাণিবিজ্ঞান জীববিজ্ঞানের অন্যতম শাখা। জীববিজ্ঞানের যে শাখায় প্রাণিজগতের সকল প্রাণীর
স্বভাব, বাসস্থান, গঠন, শারীরবৃত্তীয়, উৎপত্তি ও বিবর্তন, বংশগতি, বিস্তৃতি এবং পরিবেশের সাথে
সম্পর্কের বিষয়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হয় তাকে প্রাণিবিজ্ঞান বলে। দুটি গ্রিক শব্দ Zoon (প্রাণী) ও
Logos (জ্ঞান) সমন্বয়ে Zoology টার্ম উদ্ভূত হয়েছে। প্রাণিবিজ্ঞান জনক হলেন এরিস্টটল।
২। লিনিয়ান হায়ারআর্কি কি?
উত্তরঃ লিনিয়াস তাঁর প্রবর্তিত শ্রেণিবিন্যাসকে সাতটি ধাপে বা স্তরে বিভক্ত করেন। তিনি তাঁর প্রবর্তিত ধাপ
বা স্তরগুলোকে আরোহী ও অবরোহীভাবে সাজিয়ে প্রাণী বা উদ্ভিদের শ্রেণিবিন্যাসের যে নিয়ম চালু করেন
তাকে লিনিয়ান হায়ারআর্কি বলে।
৩। জীববিজ্ঞানের শাখাসমূহের নাম কী কী ?
ভৌত জীববিজ্ঞান (Physical Biology)
জীববিজ্ঞানের যে শাখায় তত্ত্বীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা ও গবেষণা করা হয় তাকে ভৌত জীববিজ্ঞান (Physical Biology) বলে। ভৌত জীববিজ্ঞানে যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয় সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হল-
অঙ্গসংস্থান (Morphology): মরফোলজি (Morphology) বা অভাসংস্থানবিদ্যাঃ জীব বিজ্ঞানের যে শাখায় জীবের বাঁহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ গঠন সম্পর্কে আলোচনা করা হয় তাকে মরফোলজি (Morphology) বলে। দেহের বাহ্যিক বর্ণনার বিষয়কে
বহিঃঅঙ্গসংস্থান (External Morphology) এবং দেহের অভ্যন্তরীণ বর্ণনার বিষয়কে অন্তঃঅঙ্গসংস্থান (Internal Morphology) বলা হয়। অভ্যন্তরীণ গঠন বিষয়কে এনাটমি (Anatomy) বলা হয়।।
শ্রেণিবিন্যাসবিদ্যা বা ট্যাক্সোনমি
(Taxonomy): জীববিজ্ঞানের যে শাখায় জীবদের সনাক্তকরণ, নামকরণ ও বিভিন্ন দল-উপদঙ্গল বিভক্তিকরণ নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে ট্যাক্সোনমি (Taxonomy) বা শ্রেণীবিন্যাসবিদ্যা বলে।
শারীরবিদ্যা (Physiology): জীববিজ্ঞানের যে শাখায় জীবদেহের বৃদ্ধি, শ্বসন, রেচন, সালোকসংশ্লেষণ ইত্যাদি নানা ধরণের জৈবনিক প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে ফিজিওলজি (Physiology) বা শারীরবিদ্যা বলে।
হিস্টোলজি (Histology): জীববিজ্ঞানের যে শাখায় জীবদেহের টিস্যুসমূহের গঠন, বিন্যাস এবং কার্যাবলি নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে হিস্টোলজি (Histology) বলে।
ভ্ৰূণবিদ্যা (Embryology): জীববিজ্ঞানের যে শাখায় জীবদেহের জনন কোষের উৎপত্তি, নিষিক্ত জাইগোট থেকে ভ্রূণের সৃষ্টি, গঠন, পরিস্ফুটন, বিকাশ প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে ভ্ৰূণবিদ্যা (Embryology) বলে।
কোষবিদ্যা (Cytology): জীববিজ্ঞানের যে শাখায় জীবদেহের কোষের গঠন, কার্যাবলি ও বিভাজন সম্পর্কে যাবতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে কোষবিদ্যা (Cytology) বলে।
বংশগতিবিদ্যা বা জেনেটিক্স (Genetics): জীববিজ্ঞানের যে শাখায় জীবের বৈশিষ্ট্য কিভাবে মাতাপিতা থেকে সন্তানের মাঝে যায় এবং কিভাবে তা নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন করা যায় এগুলো আলোচনা ও গবেষণা করা হয় তাকে জেনেটিক্স (Genetics) বা বংশগতিবিদ্যা বলে।
বিবর্তনবিদ্যা (Evolution): জীববিজ্ঞানের যে শাখায় জীবের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করা হয় তাকে ইভোলিউশন (Evolution) বা অভিব্যক্ত বলে।
বাস্তুবিদ্যা (Ecology): জীববিজ্ঞানের যে শাখায় কোন জীব বা জীব সম্প্রদায়ের উপর তার চারপাশের পরিবেশের প্রভাব এবং আন্তঃসম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে ইকোলজি (Ecology) বা বাস্তুবিদ্যা বলে।
এন্ডোক্রাইনোলজি (Endocrinology):
জীববিজ্ঞানের যে শাখায় জীবদেহে হরমোনের (hormone) কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে এন্ডোক্রাইনোলজি (Endocrinology) বলে।
জীবভূগোল (Biogeography): জীববিজ্ঞানের যে শাখায় পৃথিবীর বিভিন্ন ভৌগোলিক সীমারেখায় জীবের বিস্তৃতি এবং অভিযোজন সম্পর্কে আলোচনা করা হয় তাকে জীবভূগোল (Biogeography) বলে।
ফলিত জীববিজ্ঞান (Applied Biology)
জীববিজ্ঞানের যে শাখায় জীবন-সংশ্লিষ্ট প্রায়োগিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা ও গবেষণা করা হয় তাকে ফলিত জীববিজ্ঞান (Applied Biology) বলে। ফলিত জীববিজ্ঞানে যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয় সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হল-
জীবাশ্মবিজ্ঞান (Palaeontology): প্রাগৈতিহাসিক মসয়ের জীবের বিবরণ এবং জীবাশ্ম সম্পর্কিত বিজ্ঞানকে জীবাশ্মবিজ্ঞান বলে।
জীবপরিসংখ্যানবিদ্যা (Biostatistics): যে শাখায় জীবের পরিসংখ্যান নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে জীব-পরিসংখ্যানবিদ্যা বলে।
পরজীবীবিদ্যা (Parasitology): জীব বিজ্ঞানের এই শাখায় জীবের পরজীবিতা, পরজীবী জীবের জীবনপ্রণালী এবং রোগ নিয়ে আলোচনা করা হয়।
মৎস্যবিজ্ঞান (Fisheries): মৎস্যবিজ্ঞান শাখায় মাছ, মাছের উৎপাদন, মৎস্য সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।
কীটতত্ত্ব (Entomology): জীব বিজ্ঞানের এই শাখায় কীটপতঙ্গের জীবন, উপকারিতা, অপকারিতা, ক্ষয়ক্ষতি, দমন ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।
অণুজীববিজ্ঞান (Microbiology): ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, আণুবীক্ষণিক ছত্রাক এবং অন্যান্য অণুজীব সম্পর্কিত বিজ্ঞানকে অণুজীববিজ্ঞান বলে।
কৃষিবিজ্ঞান (Agriculture): এই শাখায় কৃষিবিষয়ক সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
চিকিৎসাবিজ্ঞান (Medical Science): চিকিৎসা বিজ্ঞান শাখায় মানবদেহ, রোগ, চিকিৎসা ইত্যাদি সকল বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
জিনপ্রযুক্তি (Genetic Engineering): যে শাখায় জিনপ্রযুক্তি ও এর ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করা হয় তাকে জিনপ্রযুক্তি বিজ্ঞান বলে।
প্রাণরসায়ন (Biochemistry): জীবের প্রাণরাসায়নিক কার্যপ্রণালি, রোগ ইত্যাদি সম্পর্কিত বিজ্ঞানকে প্রাণরসায়ন বলে।
পরিবেশ বিজ্ঞান (Environmental Science): যে শাখায় পরিবেশ সম্পর্কে আলোচনা করা হয় তাকে পরিবেশ বিজ্ঞান বলে।
সামুদ্রিক জীববিজ্ঞান (Marine Biology): যে শাখায় সামুদ্রিক জীব নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে সামুদ্রিক জীববিজ্ঞান বলে।
কোন্ বিশেষ দলের জীব নিয়ে আলোচনা ও গবেষণা করা হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে জীববিজ্ঞানের কিছু বিশেষ শাখার সৃষ্টি হয়েছে; যেমন-
ফাইকোলজিঃ এই শাখায় কেবল শৈবাল সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়।
মাইকোলজিঃ এই শাখায় শুধুমাত্র ছত্রাক সম্মন্ধে আলোচনা করা হয়।
ভাইরোলজিঃ এই শাখায় শুধুমাত্র ভাইরাস সম্মন্ধে আলোচনা করা হয়।
ব্যাক্টেরিওলজিঃ এই শাখায় শুধুমাত্র ব্যাকটেরিয়া সম্মন্ধে আলোচনা করা হয়।
হেলমিনথোলজিঃ এই শাখায় শুধুমাত্র কৃমি সম্মন্ধে আলোচনা করা হয়।
৪। ট্যাগমাটাইজেশন কাকে বলে ?
উত্তরঃ Arthropoda পর্বভুক্ত প্রাণীর দেহ বাহ্যিকভাবে খণ্ডায়িত হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে খণ্ডক স্পষ্ট নয় বরং দেহের বিভিন্ন স্থানে কিছু কিছু খণ্ডক একত্রিত হয়ে কয়েকটি নির্দিষ্ট অঞ্চল গঠন করে। এভাবে সৃষ্ট প্রত্যেকটি অঞ্চল ট্যাগমা নামে পরিচিত। আর ট্যাগমার মাধ্যমে দেহের অঞ্চলীকরণকে অঞ্চলায়ন বা ট্যাগমাটাইজেশন বলে।
৫। দ্বিস্তরী ও ত্রিস্তরী প্রাণী কাকে বলে ?
উত্তরঃ ক. দ্বিস্তরী বা দ্বিভ্রূণস্তরী প্রাণী (Diploblastic animal) : যেসব প্রাণীর ভ্রূণের গ্যাস্ট্রুলা পর্যায়েকোষগুলো এক্টোডার্ম ও এন্ডোডার্ম নামক দুটি স্তরে বিন্যস্ত থাকে। স্তরদুটির মাঝে থাকে আঠালো জেলির মতো অকোষীয় মেসোগ্লিয়া (mesoglea)। Cnidaria পর্বের প্রাণীরা দ্বিস্তরী (যেমন- Hydra)
খ. ত্রিস্তরী বা ত্রিভ্রূণস্তরী প্রাণী (Triploblastic animal) : ভ্রূণে গ্যাস্ট্রুলা পর্যায়ে কোষগুলো তিনটি কোষীয় স্তরে বিন্যাস্ত থাকে। তিনটি স্তরের মধ্যে বাইরের স্তরটিকে এক্টোডার্ম (ectoderm), মাঝেরটিকে মেসোডার্ম (mesoderm) এবং ভিতরেরটিকে এন্ডোডার্ম (endoderm) বলে। Platyhelminthes (ফিতাকৃমি- Taenia solium) থেকে শুরু করে Chordata (মানুষ – Homo sapiens) পর্ব পর্যন্ত প্রাণী সকল প্রাণী ত্রিস্তরী।
৬। প্রতিসাম্য কাকে বলে ও কী কী ?
উত্তরঃ প্রতিসাম্য বলতে প্রাণীদেহের মধ্যরেখীয় তলের দুপাশে সদৃশ বা সমান আকার-আকৃতিবিশিষ্ট অংশের অবস্থানকে বোঝায়।
ক. গোলীয় প্রতিসাম্য (Spherical symmetry) : একটি গোলককে যেভাবে কেন্দ্রের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত যে কোনো তল বরাবর সদৃশ বা সমান অংশে ভাগ করা যায়। যেমন-Vlovox globator. (ফটোসিন্থেটিক প্রোটিস্ট)।এছাড়া Radiolaria (উদাহরণ- Acrosphaera trepanata) এবং Heliozoa (উদাহরণ- Gymnosphaera albida) জাতীয় প্রোটিস্টান জীবে এ ধরনের প্রতিসাম্য দেখা যায়।
খ. অরীয় প্রতিসাম্য (Radial symmetry) : কোনো প্রাণীর দেহকে যদি কেন্দ্রীয় লম্ব অক্ষ বরাবর কেটে সদৃশ দুইয়ের বেশি সংখ্যক অর্ধাংশে ভাগ করা যায়। হাইড্রা (Hydra), জেলিফিশ (Aurelia), সী অ্যানিমন (Metridium)।
গ. দ্বিঅরীয় প্রতিসাম্য (Biradial symmetry) : কোনো প্রাণীদেহে যখন কোনো অঙ্গের সংখ্যা একটি কিংবা একজোড়া হওয়ায় অনুদৈর্ঘ্য অক্ষ বরাবর শুধু দুটি তল পরস্পরের সমকোণে অতিক্রম করতে পারে, ফলে ঐ প্রাণীদেহে ৪টি সদৃশ অংশে বিভক্ত হতে পারে। এ ধরণের প্রতিসাম্য হচ্ছে দ্বিঅরীয় প্রতিসাম্য। Ctenophora (টিনোফোরা) পর্বভুক্ত প্রাণীর দেহ, যেমন- ceoloplana)
ঘ. দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসাম্য (Bilateral symmetry) : যখন কোনো প্রাণীর দেহকে কেন্দ্রীয় অক্ষ বরাবর শুধু একবার ডান ও বামপাশে (অর্থাৎ স্যাজিটাল তল) দুটি সদৃশ অংশে ভাগ করা যায়, তখন তাকে দ্বিপার্শীয় প্রতিসাম্য বলে। যেমন- প্রজাপতি (Pieris brassicae), ব্যাঙ (Fejervarya asmati), মানুষ (Homo sapiens) প্রভৃতি।
ঙ. অপ্রতিসাম্য (Asymmetry) : যখন কোনো প্রাণীর দেহকে অক্ষ বা দেহতল বরাবর ছেদ করলে একবারও দুটি সদৃশ অংশে ভাগ করা যায় না তখন তাকে অপ্রতিসাম্য বলে । উদাহরণ -স্পঞ্জ (Cliona celata), আপেল শামুক (Pila globosa) ইত্যাদি।
৭। মানুষের শ্রেণিবিন্যাস করুন ।
উত্তরঃ জগৎ: Animalia
পর্ব: Chordata
শ্রেণি: Mammalia
বর্গ: Primates
গোত্র: Hominidae
গণ: Homo
প্রজাতি: H. sapiens
৮মানুষের হৃদপিন্ড ৪ প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট। এগুলো হচ্ছে-
ডান অলিন্দ (Right Atrium)
ডান নিলয় (Right Ventricle)
বাম অলিন্দ (Left Atrium)
বাম নিলয় (Left Ventricle)