অধ্যায় – ০২ ( শ্রেণিবিন্যাসবিদ্যা )
১। শ্রেণিবিন্যাস কাকে বলে ? কত প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ শ্রেণিবিন্যাস হলো জীবজগতকে তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন দলে বিভাজনের প্রক্রিয়া। এটি সমস্ত জীবকে ধাপে ধাপে সংগঠন করে। জনক হলেন ক্যারোলাস লিনিয়াস।
শ্রেণিবিন্যাস ৩ প্রকার। যথা –
ক) প্রাকৃতিক শ্রেণিবিন্যাস ( বেনথাম ও হুকার এর শ্রেণিবিন্যাস )
খ) কৃত্রিম শ্রেণিবিন্যাস ( থিয়োফ্রাস্টাস ও লিনিয়াস )
গ) জাতিজনি শ্রেণিবিন্যাস ( এঙ্গলার ও প্রান্টল)
২। শ্রেণিবিন্যাসের কয়টি ধাপ ?
উত্তরঃ শ্রেণিবিন্যাসের আবশ্যিক ধাপ হচ্ছে ৭টি, যথা ➞ Kingdom (রাজ্য), Phylum (পর্ব), Class (শ্রেণি), Order (বর্গ), Family (গোত্র), Genus (গণ) ও Species (প্রজাতি)
• ট্যাক্সন হচ্ছে শ্রেণিবদ্ধগত একক
• শ্রেণিবিন্যাসের মূল বা ভিত্তি একক হচ্ছে প্রজাতি
• শ্রেণিবিন্যাসের সর্বোচ্চ স্তর হলো পর্ব
• রাজ্য হলো প্রাণী শ্রেনিবিন্যাসের সার্বজনীন স্তর।
৩। ICBN-এর পূর্ণনাম কী?
উত্তরঃ International Code of Botanical Nomenclature. এর নীতিমালা – ৬ টি ।
৪। দ্বিপদ নামকরণ কাকে বলে?
উত্তরঃ দ্বিপদ নামকরণ বলতে বোঝায় দুটি পদের সমন্বয়ে উদ্ভিদ ও প্রাণীর বৈজ্ঞানিক নামকরণের পদ্ধতি। ১৭৫৮ সালে সুইডিশ বিজ্ঞানী ক্যারোলাস লিনিয়াস প্রাণীর দ্বিপদ নামকরণের নীতি প্রবর্তন করেন। এ জন্য তাঁকে দ্বিপদ নামকরণের জনক বলা হয়।
৫। ক্যারোলাস লিনিয়াস সমস্ত উদ্ভিদজগৎকে কয়টি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন ?
উত্তরঃ ২৪ টি।
৬। এঙ্গলার ও প্রান্টল উদ্ভিদজগৎকে কয়টি ভাগে ভাগ করেন ?
উত্তরঃ ১৩ টি ।
৭। মারগুলিস ও হুইটেকার সমস্ত জীবজগৎ মকে কয়টি রাজ্যে ভাগ করেন ?
উত্তরঃ ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে Whittaker একটি Five Kingdom পদ্ধতি প্রস্তাব করেন। তিনি সব কোষীয় জীবকে Monera, Protista, Plantae, Fungi এবং Animalia এ ৫টি কিংডমে ভাগ করেন। তারপর Margulis ১৯৭৪ সালে Whittaker-এর শ্রেণিবিন্যাসকে পরিবর্তিত ও বিস্তারিত করেন। তিনি জীবজগতকে ২টি সুপার কিংডম ও ৫টি কিংডমে ভাগ করেন।
মনেরা ( Monera ) – Bracillus albus, Nostoc Linckia.
প্রোটোকটিস্টা ( Protoctista) – Spirogyra hyalina.
ফানজাই ( Fungi ) – Penicilium notatum, Agaricus.
৮। ট্যাক্সন ও ট্যাক্সা কাকে বলে ?
উত্তরঃ শ্রেণিবিন্যাসের যেকোনো একককে ট্যাক্সন (Taxon), বহুবচনে ট্যাক্সা (Taxa) বলে।
৯। ক্যারোলাস লিনিয়াসের দ্বিপদ নামকরনের উপর একটি বইয়ের নাম বলুন।
উত্তরঃ ১৭৫৩ সালে সর্বপ্রথম তার Species Plantarum বইতে বর্ণিত সকল উদ্ভিদ প্রজাতির জন্য দ্বিপদ নাম প্রদান করেন।
১০। প্রজাতি কাকে বলে ?
উত্তরঃ প্রজাতি বলতে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যে সর্বাধিক মিলসম্পন্ন একদল জীবকে বোঝায় যারা নিজেদের মধ্যে মিলনে উর্বর সন্তান উৎপাদনে সক্ষম কিন্তু অন্য প্রজাতির সাথে মিলনে উর্বর সন্তান উৎপাদনে অক্ষম।
১১। প্রাণিজগৎকে কয়টি পর্বে ভাগ করা হয়েছে ?
উত্তরঃ ৯ টি।
প্রাণিজগতের ৯টি প্রধান পর্ব এবং প্রতিটির উদাহরণ নিচে দেওয়া হলো:
Porifera (স্পঞ্জ)উদাহরণ: Spongilla, Euplectella
Cnidaria (নিডারিয়া)উদাহরণ: Hydra, Jellyfish, Sea Anemone
Platyhelminthes (প্লাটিহেলমিনথেস)উদাহরণ: Tapeworm, Liver Fluke, Planaria
Nematoda (নেমাটোডা)উদাহরণ: Ascaris, Hookworm, Filaria worm
Annelida (অ্যানেলিডা)উদাহরণ: Earthworm, Leech, Polychaete
Arthropoda (আর্থ্রোপোডা)উদাহরণ: Butterfly, Spider, Crab
Mollusca (মোলাস্কা)উদাহরণ: Snail, Octopus, Clam
Echinodermata (একাইনোডারমাটা)উদাহরণ: Starfish, Sea urchin, Sea cucumber
Chordata (কর্ডাটা)উদাহরণ: Human, Fish, Frog
১২। বৃহত্তম পর্বের নাম বলুন ?
উত্তরঃ আর্থ্রোপোডা।
১৩। কর্ডাটা পর্বের প্রাণীদের ৪ টি বৈশিষ্ট্য বলুন।
উত্তরঃ
১. পরিণত প্রাণীতে নটোকর্ড থাকে না। লার্ভা দশায় কেবল লেজে নটোকর্ড থাকে।
২. পরিণত প্রাণী নিশ্চল এবং স্থায়ীভাবে নিমজ্জিত কোন বস্তুর সঙ্গে আটকানো থাকে, কিন্তু লার্ভা মুক্ত সাঁতারু।
৩. দেহ সেলুলোজ নির্মিত টিউনিক বা টেস্ট নামক আচ্ছাদনে আবৃত।
৪. সকলেই সামুদ্রিক এবং সমুদ্রের তলদেশে একক বা কলোনি গঠন করে বাস করে।
১৪। নন কর্ডেট এর বৈশিষ্ট্য লিখুন।
উত্তরঃ
১। নন-কর্ডাটাদের জীবনের কোনো পর্যায়ে নটোকর্ড থাকে না।
২। নন-কর্ডাটার ক্ষেত্রে অঙ্কীয়দেশে স্নায়ুরজ্জু অবস্থিত।
৩। নন-কর্ডাটার দেহে ফুলকা থাকলেও ফুলকা রন্ধ্র নেই।
৪। নন-কর্ডাটার ক্ষেত্রে রক্তরসে হিমোগ্লোবিন দ্রবীভূত থাকে।
১৪। পরিফেরা পর্বের বৈশিষ্ট্য লিখুন ।
উত্তরঃ
১. এদের দেহ অরীয় প্রতিসম বা অপ্রতিসম।
২. এদের সারা দেহে অস্টিয়া নামক অসংখ্য ছিদ্র বিদ্যমান।
৩. এদের দেহ চ্যাপ্টা, লম্বা, ফুলদানির ন্যায় অথবা বর্তুল আকারের।
৪. সমগ্র দেহব্যাপী অসংখ্য সূক্ষ্ম নালিকা আছে। এ নালিকার মাধ্যমে পানি ভেতরে যাওয়া- আসা করতে পারে।
১৫। আর্থ্রোপোডার বৈশিষ্ট্য বলুন।
উত্তরঃ আর্থ্রোপোডা পর্বের প্রাণীর বৈশিষ্ট্য:
১। দেহ কাইটিন নির্মিত বহিঃকঙ্কাল দিয়ে আবৃত, নির্দিষ্ট সময় পর পর এ কঙ্কাল পরিত্যক্ত হয় ।
২। দেহ খণ্ডায়িত,টাগমাটাইজেসন দেখা যায়। দেহখন্ডক পার্শ্বীয় সন্ধিযুক্ত উপাঙ্গ (Jointed appendages) বিশিষ্ট।
৩৷ এদের দেহকে দুটি সমান অংশে ভাগ করা যায় তাই এরা দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম হয়।
৪। পর্বের প্রাণীদের পৌষ্টিকতন্ত্র সম্পূর্ণ এবং এদের উপাঙ্গ পরিবর্তিত হয়ে মুখোপাঙ্গ গঠিত হয়।
৫। দেহের প্রাণীর সিলোম সংক্ষিপ্ত, অধিকাংশ দেহগহ্বরে রক্তে পূর্ণ যা হিমোসিল (Haemocoel) নামে পরিচিত।
৬। মালপিজিয়ান নালিকা প্রধান রেচন অঙ্গ।
১৬। টটোনিম কাকে বলে ?
উত্তরঃ গন এবং প্রজাতির নাম একই হলে তাকে টটোনিম ( Tautonym) বলে । উদাহরণ – Catla catla, Gorilla gorilla, Naja naja.
১৭। ক্যারোলাস লিনিয়াসকে Father of Taxonomy বলা হয় কেন?
উত্তরঃ সুইডিশ প্রকৃতি বিজ্ঞানী ক্যারোলাস লিনিয়াসই সর্বপ্রথম পৃথিবীর সকল জীবের দ্বিপদ নাম তথা বৈজ্ঞানিক নামকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং বৈজ্ঞানিক নামকরণ পদ্ধতি প্রবর্তন করেন। এছাড়াও তিনি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জীবের বৈজ্ঞানিক নাম প্রণয়ন করেন। তাই ক্যারোলাস লিনিয়াসকে Father of Taxonomy বলা হয়।
৯ টি পর্বের বৈশিষ্ট্য ও উদাহরণ
আরো জেনে নিন
১৮। ট্যাগমাটাইজশন কাকে বলে ?
উত্তরঃ Arthropoda পর্বভুক্ত প্রাণীর দেহ বাহ্যিকভাবে খন্ডকায়িত। কিন্তু এর অধিকাংশ খন্ডকগুলাে স্পষ্ট নয়। অস্পষ্ট খন্ডকগুলাে দেহের বিভিন্ন জায়গায় মিলিত হয়ে দেহে কয়েকটি নির্দিষ্ট অঞ্চল গঠন করে। এই গঠনকৃত প্রত্যেকটি অঞ্চলকে ট্যাগমা বলে এবং ট্যাগমা সৃষ্টির মাধ্যমে দেহের অঞ্চলীকরণই হল ট্যাগমাটাইজেশন।