অধ্যায় – ০৭ ( প্রজনন )

১। প্রজনন কাকে বলে  ?  কত প্রকার ও কী কী ? 

উত্তরঃ প্রজনন একটি শারীরতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া, যে প্রক্রিয়ায় জীব তার নিজের অনুরূপ অপত্য বংশধর সৃষ্টি করে।

যে প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ এক বা একাধিক উদ্ভিদ তৈরি করে, তাকে উদ্ভিদ প্রজনন (Plant Reproduction) বলে।
প্রজননের প্রকারভেদ :-
জীবের প্রজনন দু’প্রকার। যথা-

(ক) অযৌন প্রজনন এবং

(খ) যৌন প্রজনন ।

অযৌন প্রজনন-

পুং (শুক্রাণু) ও স্ত্রী (ডিম্বাণু) গ্যামিটের মিলন ছাড়া জীবের প্রজননকে বলা হয় অযৌন প্রজনন (Asexual reproduction)।

এ ধরনের প্রজননে একসঙ্গে বহু সংখ্যক জীব উৎপন্ন হয়। একটি প্রজনক থেকে উৎপন্ন হয় বলে এ প্রক্রিয়ায় জীবে কোন বৈচিত্র আসে না। নিম্নশ্রেণির জীব, যেমন- শৈবাল, ছত্রাক, মস, ফার্ণ প্রভৃতিতে সাধারণত স্পোর উৎপাদনের মাধ্যমে অযৌন জননসম্পন্ন হয়।
তাছাড়া বিভাজন, মুকুল উৎপাদান পুনরুৎপাদন, অঙ্গজ জনন প্রভৃতি প্রতিনায় জীবকূলে সাধারণত অযৌন প্রজনন সম্পন্ন হয়।

যৌন প্রজনন-

দুটি ভিন্ন প্রকৃতির যথা পুং ও স্ত্রী গ্যামিট পরস্পরের সাথে মিলিত হয়ে যে প্রজনন ঘটে তাকে যৌন প্ৰজনন (Sexual reproduction) বলা হয়।

২। নিষেক ও দ্বি – নিষেক কাকে বলে ? 

উত্তরঃ 

নিষেকঃ স্ত্রী গ্যামিট ও পুরুষ গ্যামিটের যৌন মিলন প্রক্রিয়া হল নিষেক। পরাগধাণী থেকে পরাগরেণুর মাধ্যমে পুং গ্যামিট সচল হয়ে নিশ্চল স্ত্রী গ্যামিটের কাছে গমন করে এবং নিষেক ঘটায়।

দ্বিনিষেকক্রিয়া বা দ্বি-নিষেক (Double fertilization) : একই সময়ে ডিম্বাণুর সাথে একটি পুংগ্যামিটের মিলন ও সেকেন্ডারি নিউক্লিয়াসের সাথে অপর পুংগ্যামিটের মিলন প্রক্রিয়াকে দ্বিনিষেকক্রিয়া (double fertilization) বা দ্বিগর্ভাধান প্রক্রিয়া বলে। দ্বিনিষেক আবৃতবীজী উদ্ভিদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য (নগ্নবীজী উদ্ভিদের Ephedra-তে দ্বিনিষেক আবিস্কৃত হয় ১৯৯০ সালে- এটি ব্যতিক্রম)।

৩।  পরাগায়ন কাকে বলে ?   কত প্রকার  ও কী কী ? 

উত্তরঃ ফুলের পরাগ সংযোগকে পরাগায়ন(Pollination) বলে।
পরাগায়ন(Pollination) দুই প্রকার :
i)স্ব-পরাগায়ন

ii)পর পরাগায়ন

i) স্ব-পরাগায়ন (Self-pollination):
একই ফুলে বা একই গাছের ভিন্ন দুটি ফুলের মধ্যে যখন পরাগায়ন ঘটে তখন তাকে স্বপরাগায়ন (Self-pollination) বলে। যেমন: ধুতরা, সরিষা।

স্বপরাগায়ন এর ফলে পরাগরেণুর অপচয় কম হয়।
গড় আয়ু ও অভিযোজন ক্ষমতা কম।
ii) পর পরাগায়ন (cross-pollination): একই প্রজাতির দুটি ভিন্ন উদ্ভিদের ফুলের মধ্যে যখন পরাগ সংযোগ ঘটে তখন তাকে পর পরাগায়ন (cross-pollination) বলে। যেমন: শিমুল, পেঁপে।
এদের পরাগরেণুর অপচয় বেশি হয়।
গড় আয়ু ও অভিযোজন ক্ষমতা বেশি।

৪। গ্যামেটোজেনেসিস কাকে বলে ? 

উত্তরঃ যে প্রক্রিয়ায় জনন অঙ্গের (শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয়) প্রাইমর্ডিয়াল জননকোষ (জনন মাতৃকোষ) থেকে গ্যামেট (শুক্রাণু ও ডিম্বাণু) উৎপন্ন হয়ে নিষেকে সক্ষম হয়ে উঠে তাকে গ্যামেটোজেনেসিস (গ্রিক gamos = জননকোষ এবং genesis = উৎপত্তি হওয়া) বলে।

৫। স্পার্মাটোজেনেসিস কাকে বলে ? 

উত্তরঃ পূর্ণাঙ্গ শুক্রাণু সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে স্পার্মাটোজেনেসিস (spermatogenesis: গ্রিক sperma = শুক্রাণু + genesis = জনন বা সৃষ্টি) বলে।

৬। উওজেনেসিস কাকে বলে ? 

উত্তরঃ ডিম্বাশয়ের অভ্যন্তরে ডিম্বাণু সৃষ্টির পদ্ধতিকে উওজেনেসিস (oogonesis; গ্রিক oon = ডিম্বাণু + genesis = সৃষ্টি বা জনন) বলে।

৭। প্রতিটি পরিপক্ক ডিম্বানুকে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায় ? 

উত্তরঃ প্রতিটি পরিপক্ক ডিম্বাণুকে তিনটি অংশে ভাগ করা যায়, যথা: ডিম্বাণু ঝিল্লি, নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম।

৮। ফুল কাকে বলে ? এর বৈশিষ্ট্য লিখুন। 

উত্তরঃ প্রজননের জন্য রূপান্তরিত বিশেষ বিটপকে ফুল(Flower) বলে।
ক) একটি আদর্শ ফুলের পাঁচটি স্তবকের মধ্যে দুটি স্তবক- পুং স্তবক ও স্ত্রী স্তবক সরাসরি প্রজননে অংশ নেয়। অন্য স্তবক গুলো সরাসরি অংশ নেয় না। কিন্তু প্রজননে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
খ) যে ফুলে পাঁচটি স্তবকই উপস্থিত থাকে তাকে সম্পূর্ণ ফুল বলে। যেমন: ধুতুরা, জবা।
পাঁচটি স্তবকের যেকোন একটি না থাকলে তাকে অসম্পূর্ণ ফুল বলে। যেমন: লাউ, কুমড়া।
গ) বৃন্তযুক্ত ফুলকে সবৃন্তক ফুল বলে। যেমন: জবা, কুমড়া।
ঘ) বৃন্তহীন ফুলকে অবৃন্তক ফুল বলে। যেমন: হাতিশূঁড়।

৯। একটি আদর্শ ফুলের বিভিন্ন অংশ বর্ণনা করুন । 

উত্তরঃ ফুলের বিভিন্ন অংশ (Different parts of the flower):a) পুষ্পাক্ষ (Thalmus):
পুষ্পাক্ষ সাধারণত গোলাকার এবং ফুলের বৃন্ত শীর্ষে অবস্থান করে। পুষ্পাক্ষের উপর বাকি চারটি স্তবক পরপর সাজানো থাকে।
পুষ্পাক্ষের উপর বাকী চারটি স্তবক পরপর সাজানো থাকে।
b) বৃতি (calyx):
ফুলের বাইরের স্তবককে বৃতি বলে।
সবুজ বৃতি খাদ্য প্রস্তুত কাজে অংশ নেয়।
বৃতির প্রধান কাজ ফুল এর ভেতরের অংশগুলোকে রোদ-বৃষ্টি ও পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করা।
রঙ বেরঙের বৃতি পরাগায়নে সাহায্য করে।
c) দলমণ্ডল (Corolla):
এটি বাইরের দিক থেকে দ্বিতীয় স্তবক।
প্রতিটি খণ্ডকে দল বা পাপড়ি বলে।
দলমণ্ডল ফুলের অত্যাবশ্যকীয় অংশগুলোকে রোদ বৃষ্টি থেকে রক্ষা করে।
উজ্জ্বল, ঝলমলে রঙ্গিন দলমন্ডল পোকামাকড় এবং পশুপাখিকে আকর্ষণ করে এবং পরাগায়নে সহায়তা করে।
d) পুংস্তবক (Androecium):
ফুলের তৃতীয় স্তবক।
স্তবকের প্রতিটি অংশকে পুংকেশর বলে।
পরাগধানী ও পুংদণ্ড সংযোগকারী অংশকে যোজনী বলে।
পুং জননকোষ সরাসরি জনন কাজে অংশগ্রহণ করে।
যখন পরাগধানী একগুচ্ছ থাকে তখন তাকে যুক্তধানী বা সিনজেনিয়াস বলে।
মুক্ত অবস্থায় এবং পূর্ণ কেশর দলমন্ডলের সাথে যুক্ত থাকলে তাকে দললগ্ন পুং পুস্তক বলে। যেমন: ধুতুরা।

পুংকেশরের বিভিন্ন প্রকার সজ্জা (ক) একগুচ্ছ, (খ) দ্বিগুচ্ছ, (গ) বহুগুচ্ছ, (ঘ) যুক্তধানী এবং (ঙ) দললগ্ন

e) স্ত্রীস্তবক (Gynoecium):
স্ত্রী স্তবক বা গর্ভকেশর এর অবস্থান ফুলটির কেন্দ্রে থাকে।
স্ত্রী স্তবক এক বা একাধিক গর্ভপত্র নিয়ে গঠিত।
একটি গর্ভপত্রের তিনটি অংশ। যথা:-
১। গর্ভাশয়
২। গর্ভদণ্ড
৩। গর্ভমুণ্ড
গর্ভাশয় এর ভিতরে এক বা একাধিক ডিম্বক বিশেষ নিয়মের সজ্জিত থাকে। এসব ডিম্বকের মধ্যে স্ত্রী প্রজনন কোষ বা ডিম্বাণু সৃষ্টি হয়।

পুষ্পমঞ্জরি (inflorescence)
অনেক গাছের ছোট একটি শাখায় ফুলগুলো বিশেষ একটি নিয়মে সাজানো থাকে। ফুলসহ এই শাখাকে পুষ্পমঞ্জরি বলে।

১০। পার্থেনোকার্পি কী ? 

উত্তরঃ  হরমোন প্রয়োগে বীজহীন ফল উৎপাদন প্রক্রিয়াকে পার্থেনোকারপি বলে।

১১। পরাগরেণু বা মাইক্রোস্পোর কাকে বলে ? 

উত্তরঃ পরাগধানীর অভ্যন্তরে ডিপ্লয়েড মাইক্রোস্পোর মাতৃকোষ থেকে সৃষ্ট হ্যাপ্লয়েড জনন  কোষকে মাইক্রোস্পোর বা পরাগরেণু বলে।

১২। ট্যাপেটাম কী ? 

উত্তরঃ : মাইক্রোস্পোরোজেনেসিস এর সময় একে আর্কিস্পোরিয়াল কোষ বিভাজিত হয়ে পরিধির দিকে দেয়ালকোষ  এবং কেন্দ্রের দিকে প্রাথমিক জনন কোষে পরিণত হয়। দেয়াল কোষপ্রাচীরের সবচেয়ে ভেতরের স্তরকে ট্যাপেটাম বলে।

১৩। ডিম্বক কাকে বলে ? 

উত্তরঃ গর্ভধারণের পর ডিম্বাশয়ের যে অংশ বীজে পরিণত হয় তাকে ডিম্বক বা মেগাস্পোরাঞ্জিয়াম বলে।

১৪। অমরা কাকে বলে ? 

উত্তরঃ  যে বিশেষ অঙ্গের মাধ্যমে মাতৃ জরায়ুতে ক্রমবর্ধমান ভ্রূণ ও মাতৃ জরায়ু টিস্যুর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপিত হয় তাকে অমরা বা গর্ভফুল বলে।

১৫। রজঃচক্র কাকে বলে ? 

উত্তরঃ  স্ত্রীলোকের সমগ্র যৌন জীবনকালে প্রতি ২৮ দিন (২৪-৩২ দিন) অন্তর ৩-৫ দিন ধরে জরায়ুর অন্তঃস্থ স্তর বা এন্ডোমেট্রিয়ামের অবক্ষয়ের ফলে রজঃস্রাব এবং পরে দেহের অন্যান্য জননাঙ্গসমূহের যেমন-ডিম্বাশয়, জরায়ু ইত্যাদির যে পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তন ঘটে তাকে রজঃচক্র বলে। প্রথম রজচক্রকে মেনার্কি (menarche) এবং যৌন জীবনকালের শেষে রজঃচক্রের নিবৃত্তি বা বন্ধ হওয়াকে মেনোপজ (menopause) বলে।

১৬। ক্লিভেজ সম্পর্কে লিখুন। 

উত্তরঃ  ক্লিভেজ (Cleavage):যে প্রক্রিয়ায় জাইগোট মাইটোসিস বিভাজনের মাধ্যমে বিভাজিত হয়ে অসংখ্য ভ্রূণকোষ সৃষ্টি করে তাকে ক্লিভেজ বা সম্ভেদ বলে। ক্লিভেজে সৃষ্ট ভ্রূণের প্রতিটি কোষকে বলে ব্লাস্ট্রোমিয়ার (blastormere)। ক্লিভেজ প্রক্রিয়ায় ক্রমাগত কোষ বিভাজনের ফলে জাইগোটটি বহুকোষী নিরেট গোলকে পরিণত হয়। এর নাম মরুলা (morula)। মরুলার কোষগুলো ক্রমশ একস্তরে সজ্জিত হয় এবং এর ভিতরে একটি তরল পূর্ণ গহ্বর সৃষ্টি হয়। ভ্রূণের এ দশাকে ব্লাস্টুলা (blastula) বলে। ব্লাস্টুলার প্রাচীরকে ব্লাস্টোডার্ম (blastoderm) এবং তরল পূর্ণ গহ্বরকে ব্লাস্টোসিল (blastocoel) বলে। ভ্রূণ ব্লাস্টুলায় পরিণত হওয়ার সাথে সাথে ক্লিভেজ দশার পরিসমাপ্তি ঘটে।

১৬। ফিটাস কাকে বলে ? 

উত্তরঃ জাইগোট সৃষ্টির ৭ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভস্থ ভ্রুনকে মনুষ্যরুপে সনাক্ত করা হয়। ভ্রুনের এ অবস্থাকে ফিটাস (fetus) বলে।

১৭। নিষেকের পর গর্ভাশয় ও ডিম্বকের বিভিন্ন পরিবর্তন লিখুন।

উত্তরঃ

Scroll to Top