অধ্যায় – ০৬ (সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ )

অধ্যায়  – ০৬ ( সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ ) 

১। হরমোন কাকে বলে ? 

উত্তরঃ যে জৈব রাসায়নিক পদার্থ উদ্ভিদদেহে উৎপন্ন হয়ে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও বিকাশ, বিভিন্ন অঙ্গ সৃষ্টি ইত্যাদি কাজ নিয়ন্ত্রণ করে, তাকে হরমোন বা প্রাণরস বল । 

২। ফাইটোহরমোন কাকে বলে ? 

উত্তরঃ  উদ্ভিদদেহে উৎপাদিত যে রাসায়নিক পদার্থ উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও বিকাশ, বিভিন্ন অঙ্গ সৃষ্টি ইত্যাদি প্রভাবিত করে তাকে ফাইটোহরমোন বলে। যেমন: অক্সিন (Auxin), জিবেরেলিন (Gibberellin), সাইটোকাইনিন (Cytokinin), অ্যাবসিসিক এসিড (Abscisic acid), ইথিলিন (Ethylene) ইত্যাদি।

৩। কিছু ফাইটোহরমোনের নাম ও বৈশিষ্ট্য  লিখুন । 

উত্তরঃ  ফাইটোহরমোনগুলো সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।
 অক্সিন (Auxin)
 আবিষ্কারক (Discoverer) : চার্লস ডারউইন
বৈশিষ্ট্য (Characteristic) :

i) শাখা কলমে মূল গজায়।
ii) ফলের অকালে ঝরে পড়া রোধ করে।
iii) অভিস্রবন ও শ্বসন ক্রিয়ার হার বৃদ্ধি ঘটায়।

 জিবরেলিন (Gibberelin)
 i) কান্ডের অতি বৃদ্ধি ঘটায়।
ii) বীজের সুপ্তাবস্থা, দৈর্ঘ্য কমায়।
iii) অঙ্কুরোদগমে কার্যকারিতা রয়েছে।
iv) পর্ব মধ্য গুলো দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধি পায়।
সাইটোকাইনিন (Cytokinin)
i) কোষের বৃদ্ধি ঘটায়।
ii) অঙ্গের বিকাশ সাধন করে।
iii) বীজ ও অঙ্গের সুপ্তাবস্থা ভঙ্গ করে।
iv) বার্ধক্য বিলম্বিত করতে সাহায্য করে ।

ইথিলিন (Ethylene)
 এ হরমোনটি একটি গ্যাসীয় পদার্থ ।

বৈশিষ্ট্য (Characteristic) :
i) বীজ ও মুকুলের সুপ্তাবস্থা ভঙ্গ করে।
ii) চারা গাছের কান্ডের বৃদ্ধি ঘটিয়ে চারা গাছকে লম্বা হতে সাহায্য করে।
iii) ফুল ও ফল সৃষ্টির সূচনা করে।
iv) পাতা, ফুল ও ফলের ঝরে পড়া তরান্বিত করে।
v) কৃত্রিম উপায়ে ফল পাকাতে ব্যবহার হয়।

৪। প্রাণী হরমোনের নাম লিখুন। 

উত্তরঃ   পিটুইটারি গ্লান্ড (Pituitary Gland): গ্রোথ হরমোন (GH), থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন (TSH), ফলিকল-স্টিমুলেটিং হরমোন (FSH), অক্সিটোসিন (oxytocin) থাইরয়েড গ্লান্ড (Thyroid Gland): থাইরক্সিন (T4) এবং ট্রাইয়োডোথাইরোনিন (T3)
 প্যারাথাইরয়েড গ্লান্ড (Parathyroid Gland): প্যারাথাইরয়েড (Parathyroid)
 এড্রেনাল গ্লান্ড (Adrenal Gland): কর্টিসল (Cortisol), অ্যালডোস্টেরন (Aldosterone), অ্যাড্রেনালিন (Adrenaline) এবং নরড্রেনালিন (Nor Adrenaline)
 অগ্ন্যাশয় (Pancreas): ইনসুলিন (Insulin) এবং গ্লুকাগন (Glucagon)
ডিম্বাশয় (Ovary): ইস্ট্রোজেন (Estrogen) এবং প্রোজেস্টেরন (Progesterone)
 টেস্টিস (Testes): টেস্টোস্টেরন (Testosterone) 

৫। এনজাইম কাকে বলে ? 

উত্তরঃ এনজাইম এক প্রকার প্রোটিন, যা জীবদেহে বিভিন্ন বিক্রিয়ার হারকে তরান্বিত করে কিন্তু বিক্রিয়ার পর নিজেরা অপরিবর্তিত থাকে। একে জৈব অনুঘটক/ জৈব প্রভাবকও বলা হয়।  

৬। কয়েকটি স্টেরয়েড হরমোনের নাম লিখুন। 

উত্তরঃ স্টেরোয়েড -জাত হরমোন:এই ধরণের প্রাণরস কোলেস্টেরোল থেকে তৈরি হয়। যেমন: টেস্টোস্টেরন, কর্টিসল, ইস্ট্রোজেন । 

৭। ভার্নালাইজেশন কাকে বলে ? 

উত্তরঃ শৈত্য প্রদানের মাধ্যমে উদ্ভিদের ফুল ধারণকে ত্বরান্বিত করার প্রক্রিয়াকে ভার্নালাইজেশন বলে।

৮। অভিকর্ষ উপলব্ধি (Geoperception) কী?উত্তরঃ ভ্রূণমূল বা ভ্রূণকাণ্ডের অগ্রাংশ অভিকর্ষের উদ্দীপনা অনুভব করতে পারে। একে অভিকর্ষ উপলব্ধি বলে।

৯।  বায়োলজিক্যাল ক্লক কী?উত্তরঃ উদ্ভিদে আলো-অন্ধকারের ছন্দকে বায়োলজিক্যাল ক্লক বলে।

১০। ফেরোমন কী?উত্তরঃ কোনো পিঁপড়া খাদ্যের খোঁজ পেলে খাদ্য উৎস থেকে বাসায় আসার পথে এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত করে। যাকে ফেরোমন বলে।

১১। স্নায়ুতন্ত্র কী?

উত্তর : যে তন্ত্রের সাহায্যে প্রাণী উত্তেজনায় সাড়া দিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে, দেহের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে পারস্পরিক সংযোগ সাধন করে এবং তাদের কাজে সুসংবদ্ধতা আনয়ন ও শারীরবৃত্তীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে, তাকে স্নায়ুতন্ত্র বলে। 

১২। নিউরন কাকে বলে ? 

উত্তরঃ  মানুষের স্নায়বিক সমন্বয়ের প্রধান সমন্বয়কারী স্নায়ুতন্ত্রের গঠন ও কার্যকর একককে নিউরন বলে । নিউরনের দুটি প্রধান অংশ হচ্ছে কোষদেহ (cell body) এবং প্রলম্বিত অংশ বা নিউরাইট (neurite)। নিউরাইট দুধরনের অংশ নিয়ে গঠিত : বহু শাখা-প্রশাখাবিশিষ্ট ছোট ছোট প্রলম্বিত অংশ বা ডেনড্রাইট (dendrite) এবং শাখা-প্রশাখাবিহীন দীর্ঘ প্রলম্বিত অংশ বা অ্যাক্সন (axon)।

১৩। প্রতিবর্তী ক্রিয়া কাকে বলে ? 

উত্তরঃ  প্রতিবর্তী ক্রিয়া (Reflex Action) বলতে উদ্দীপনার আকস্মিকতা এবং তার কারণে স্বয়ংক্রিয় প্রতিক্রিয়াকে বোঝায়। হঠাৎ করে আঙ্গুলে সুচ ফুটলে অথবা হাতে গরম কিছু পড়লে আমরা দ্রুত হাতটি উদ্দীপনার স্থান থেকে সরিয়ে নিই, এটি প্রতিবর্তী ক্রিয়ার ফল।

১৪। অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি কাকে বলে  ? 

উত্তরঃ যে সব গ্রন্থি নালিবিহীন, তাই ক্ষরণ সরাসরি রক্ত বা লসিকার মাধ্যমে বাহিত হয়ে দূরবর্তী সুনির্দিষ্ট অঙ্গে ক্রিয়াশীল হয়, সে সব গ্রন্থিকে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি বা অনাল গ্রন্থি (dustless gland) বলে। উদাহরণ- পিটুইটারি, থাইরয়েড, অ্যাড্রেনাল ইত্যাদি গ্রন্থি। অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির ক্ষরণকে হরমোন বলে। 

১৫। অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির নাম ও উৎপত্তিস্থল লিখুন।

১৬। করোটিক স্নায়ু কাকে বলে ?

উত্তরঃ যেসব স্নায়ু মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ থেকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি হয়ে করোটিকার বিভিন্ন ছিদ্রপথে বেরিয়ে দেহের সেগুলোকে করোটিক স্নায়ু ( Cranial Nerves ) বলে। মানুষের মস্তিষ্কে বারো জোড়া করোটিক স্নায়ু আছে।

১৭। করোটিক স্নায়ুর নাম, উৎপত্তিস্থল ও কাজ লিখুন ।

১৮। সুষুম্নাকাণ্ড বা স্পাইনাল কর্ড (Spinal cord) কাকে বলে?

উত্তরঃ কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের পিছনের প্রলম্বিত অংশটি সুষুম্নাকাণ্ড । মেডুলা অবলংগাটার নিচের অংশ থেকে উদগত হয়ে এটি ফোরামেন ম্যাগনাম (foramen magnum) নামক করোটির পশ্চাৎভাগে অবস্থিত একটি বড় গোল ছিদ্রের মধ্য দিয়ে ক্রমশ সংকীর্ণ হয়ে মেরুদণ্ডের নিউরাল নালির মাধ্যমে পিছনে লাম্বার কশেরুকা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। সুষুমাকাণ্ড মস্তিষ্কের মতো মেনিনজেস দিয়ে আবৃত থাকে।