অনুজীব – ৩য় অধ্যায়।
১। অনুজীব কাকে বলে?
উত্তরঃ অণুজীব হল সেই সকল ক্ষুদ্র এককোষী জীব যাদের খালি চোখে দেখা যায় না। এরা প্রাককেন্দ্রিক, সুকেন্দ্রিক উভয় প্রকার হতে পারে। অণুজীব জগৎ তিনটি রাজ্যে বিভক্ত। যথা :ক) এক্যারিওটা বা অকোষীয়
খ) প্রোক্যারিওটা বা আদিকোষী
গ) ইউক্যারিওটা বা প্রকৃত কোষী
২৷ ভাইরাস কাকে বলে ?
উত্তরঃ ভাইরাস (Virus) হলো অতিক্ষুদ্র সংক্রামক কারক যা শুধুমাত্র একটি জীবন্ত কোষের অভ্যন্তরে বংশবৃদ্ধি করতে পারে।
। ভাইরাস নিয়ে গবেষণা ভাইরোলজি নামে পরিচিত যা মাইক্রোবায়োলজির একটি উপশাখা।
৩। ভাইরাসকে কেন অকোষীয় বলা হয়?
উত্তরঃ ভাইরাসের দেহ কোষ প্রাচীর ,প্লাজমালেমা, সুগঠিত নিউক্লিয়াস ,সাইটোপ্লাজম ইত্যাদি কিছুই না থাকার জন্য ভাইরাসকে অকোষীয় জীব বলা হয়। এটি শুধু প্রোটিন আবরণ ও নিউক্লিক এসিড নিয়ে গঠিত। অকোষীয় জীবের ভেতর প্রাথমিক সদস্য হল ভাইরাস।
৪। ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য লিখুন ।
উত্তরঃ ভাইরাসের বৈশিষ্ট্যগুলোকে দুভাগে ভাগ করা যায়; যথা-জড়-রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য এবং জীব সদৃশ বৈশিষ্ট্যজড়-রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যঃ
১ ভাইরাস অকোষীয়, অতিআণুবীক্ষণিক ও সাইটোপ্লাজমবিহীন রাসায়নিক পদার্থ ।
২. পোষক দেহের বাইরে এরা কোন জৈবনিক কার্যকলাপ ঘটায় না ।
৩. জীবকোষের বাইরে সংখ্যাবৃদ্ধি করতে পারে না।
৪. পরিস্রুতত ও কেলাসিত করে ভাইরাসকে স্ফটিকে পরিণত করা যায়।
৫. ভাইরাস আকারে বৃদ্ধি পায় না এবং পরিবেশিক উদ্দীপনায় সাড়া দেয় না ।
৬. এদের নিজস্ব কোন বিপাকীয় এনজাইম নেই।
৭. ভাইরাস রাসায়নিকভাবে প্রোটিন ও নিউক্লিক এসিডের জীবীয় বৈশিষ্ট্য সমাহার মাত্র।
জীব সদৃশ বৈশিষ্ঠ্যঃ
১. গাঠনিকভাবে ভাইরাসে নিউক্লিক এসিড (DNA বা RNA) আছে।
২. উপযুক্ত পোষক কোষের অভ্যন্তরে ভাইরাস সংখ্যাবৃদ্ধি (multiplication) করতে সক্ষম ।
৩. ভাইরাস সুনির্দিষ্টভাবে বাধ্যতামূলক পরজীবী।
৪. ভাইরাস জিনগত পুনর্বিন্যাস ঘটতে দেখা যায়।
৫. ভাইরাসে প্রকরণ (variation) ও পরিব্যক্তি (mutation) দেখা যায়।
৬. এদের অভিযোজন ক্ষমতা রয়েছে।
৭. নতুন সৃষ্ট ভাইরাসে মাতৃভাইরাসের বৈশিষ্ট্য বজায় থাকে, অর্থাৎ একটি ভাইরাস তার অনুরূপ ভাইরাস সৃষ্টি করতে পারে।
পরিব্যক্তি (mutation) : নানাবিধ কারণে জীবের বংশগতি উপাদানের এক বা একাধিক জিনের হঠাৎ স্বতঃস্ফূর্ত পরিবর্তন। এ পরিবর্তন স্থায়ী তাই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যেরও পরিবর্তন ঘটে।
৫। ভাইরাসের উপকারিতা লিখুন ।
উত্তরঃ
১। বসন্ত, পোলিও, প্লেগ এবং জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক টিকা ভাইরাস দিয়েই তৈরি করা হয়।
২। ভাইরাস হতে ‘জন্ডিস’ রোগের টিকা তৈরি করা হয়।
৩। কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয় ইত্যাদি রোগের ওষুধ তৈরিতে ব্যাকটেরিওফায ভাইরাস ব্যবহার করা হয়।
৪। ভাইরাসকে বর্তমানে বহুল আলোচিত ‘জেনেটিক প্রকৌশল’-এ বাহক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
৫। ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণে ভাইরাস ব্যবহার করা হয়।
৬। কতিপয় ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ দমনেও ভাইরাসের ভূমিকা উল্লেখ করার মতো। যুক্তরাষ্ট্রে NPV (Nuclear polyhydrosis Virus) কে কীট পতঙ্গনাশক হিসেবে প্রয়োগ করা হয়।
৭। ফায ভাইরাস ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করে থাকে।
৮। লাল টিউলিপ ফুলে ভাইরাস আক্রমণের ফলে লম্বা লম্বা সাদা সাদা দাগ পড়ে। একে ব্রোকেন টিউলিপ বলে। এর ফলে ফুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় এবং ফুলের মূল্য বেড়ে যায়।
৬। ভাইরাসের প্রকারভেদ লিখুন।
উত্তরঃ ভাইরাসের প্রকারভেদ (Types of viruses)
১। আকৃতি অনুযায়ী (According to shape)
(i) দণ্ডাকার : এদের আকার অনেকটা দণ্ডের মতো। উদাহরণ- টোবাকো মোজাইক ভাইরাস (TMV), আলফা-আলফা মোজাইক ভাইরাস, মাম্পস ভাইরাস।
(ii) গোলাকার : এদের আকার অনেকটা গোলাকার। উদাহরণ-পোলিও ভাইরাস, TIV, HIV, ডেঙ্গু ভাইরাস।
(iii) ঘনক্ষেত্রাকার/বহুভুজাকার : এসব ভাইরাস দেখতে অনেকটা পাউরুটির মতো।
যেমন- হার্পিস, ভ্যাকসিনিয়া ভাইরাস।
(iv) ব্যাঙ্গাচি আকার : এরা মাথা ও লেজ- এ দুই অংশে বিভক্ত।
উদাহরণ- T2 , T4 , T6 ইত্যাদি।
(v) সিলিন্ড্রিক্যাল/সূত্রাকার : এদের আকার লম্বা সিলিন্ডারের মতো।
যেমন- Ebola virus ও মটরের স্ট্রিক ভাইরাস।
(vi) ডিম্বাকার : এরা অনেকটা ডিম্বাকার।
উদাহরণ- ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস।
২। নিউক্লিক অ্যাসিডের ধরন অনুযায়ী (According to the types of nucleic acid)
(i) DNA ভাইরাস : যে ভাইরাসে নিউক্লিক অ্যাসিড হিসেবে DNA থাকে তাদেরকে DNA ভাইরাস বলা হয়। উদাহরণ- T2 ভাইরাস, ভ্যাকসিনিয়া, ভ্যারিওলা, TIV (Tipula Iridiscent Virus), এডিনোহার্পিস সিমপ্লেক্স ইত্যাদি ভাইরাস।
(ii) RNA ভাইরাস : যে ভাইরাসে নিউক্লিক অ্যাসিড হিসেবে RNA থাকে তাদেরকে RNA ভাইরাস বলা হয়।
উদাহরণ- TMV, HIV, ডেঙ্গু, পোলিও, মাম্পস, র্যাবিস ইত্যাদি ভাইরাস।
৩। বহিস্থ আবরণ অনুযায়ী (According to the external covering)
(i) বহিস্থ আবরণহীন ভাইরাস;
যেমন- TMV, T2 ভাইরাস।
(ii) বহিস্থ আবরণী ভাইরাস;
যেমন- ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, হার্পিস, HIV ভাইরাস।
৪। পোষকদেহ অনুসারে (According to the host body)
(i) উদ্ভিদ ভাইরাস : উদ্ভিদদেহে রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাসকে উদ্ভিদ ভাইরাস বলে।
যেমন- TMV, Bean Yellow Virus (BYV)। ব্যতিক্রম—ফুলকপির মোজাইক ভাইরাস (DNA)।
(ii) প্রাণী ভাইরাস : প্রাণিদেহে রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাসকে প্রাণী ভাইরাস বলে।
যেমন—HIV, ভ্যাকসিনিয়া ভাইরাস।
(iii) ব্যাকটেরিওফায বা ফায ভাইরাস : ভাইরাস যখন ব্যাকটেরিয়ার উপর পরজীবী হয় এবং ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে তখন তাকে ব্যাকটেরিওফায বলে।
যেমন T2 ,T4 ,T6 ব্যাকটেরিওফায।
(iv) সায়ানোফায : সায়ানোব্যাকটেরিয়া (নীলাভ সবুজ শৈবাল) ধ্বংসকারী ভাইরাসকে সায়ানোফায বলে।
যেমন-LPP1 ,LPP2 , (Lyngbya, Plectonema ও Phormidium নামক সায়ানোব্যাকটেরিয়ার প্রথম অক্ষর দিয়ে নামকরণ করা হয়েছে।)
৫। পোষক দেহে সংক্রমণ ও বংশবৃদ্ধির উপর ভিত্তি করে (Based on infection and reproduction in the host body) সাধারণ ভাইরাস ও রিট্রোভাইরাস। এখানে ভাইরাল RNA থেকে DNA তৈরি হয়।
৬। অন্যান্য ধরন (Other types)
যে সব ভাইরাস ছত্রাককে আক্রমণ করে থাকে তাদের মাইকোফায (Mycophage) বলে।
১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে Holmes ব্যাকটেরিয়া আক্রমণকারী ভাইরাসকে Phaginae, উদ্ভিদ আক্রমণকারী ভাইরাসকে Phytophaginae এবং প্রাণী আক্রমণকারী ভাইরাসকে Zoophaginae নামকরণ করেন।
৭। ভাইরাসের অপকারিতা লিখুন ?
উত্তরঃ
১। ভাইরাস মানবদেহে বসন্ত, হাম, পোলিও, জলাতঙ্ক, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হার্পিস, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ভাইরাল হেপাটাইটিস, ক্যাপোসি সার্কোমা প্রভৃতি মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করে থাকে।২। বিভিন্ন উদ্ভিদের রোগ সৃষ্টিতে যেমন-সিমের মোজাইক রোগ, আলুর লিফরোল (পাতা কুঁচকাইয়া যাওয়া), পেঁপের লিফকার্ল, ক্লোরোসিস, ধানের টুংরো রোগসহ প্রায় ৩০০ উদ্ভিদ রোগ ভাইরাস দ্বারা ঘটে থাকে। এতে ফসলের উৎপাদন বিপুলভাবে হ্রাস পায়।
৩। গরুর বসন্ত; গরু, ভেড়া, ছাগল, শূকর, মহিষ ইত্যাদি প্রাণীর ‘ফুট এ্যান্ড মাউথ’ রোগ অর্থাৎ এদের পা ও মুখের বিশেষ ক্ষতরোগ (খুরারোগ) এবং মানুষ, কুকুর ও বিড়ালের দেহে জলাতঙ্ক (hydrophobia) রোগ ভাইরাস দিয়েই সৃষ্টি হয়।
৪। ফায ভাইরাস মানুষের কিছু উপকারী ব্যাকটেরিয়াকেও ধ্বংস করে থাকে।
৫। HIV ভাইরাস দিয়ে AIDS হয়। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
৬। Ebola ভাইরাসের আক্রমণে cell lysis হয় বা কোষ ফেটে যায়।
৭। Zika ভাইরাস মশকীর মাধ্যমে ছড়ায়। মাইক্রোসেফালি ঘটে অর্থাৎ অপরিণত মস্তিষ্ক নিয়ে শিশু জন্মায়। ডেঙ্গুর মত লক্ষণ দেখা যায়।
৮। নিপা ভাইরাস Paramyxoviridae পরিবারভুক্ত একটি RNA ভাইরাস যার গণ নাম Henipavirus. ১৯৯৯ সালে মালয়েশিয়ায় শূকরের খামারে প্রথম ধরা পড়লেও দ্রুত দক্ষিণ এশিয়ায় ছড়িয়ে পরে। বাদুর এই ভাইরাসটির বাহক এবং কাঁচা খেজুরের রসের মাধ্যমে এ ভাইরাস মানবদেহে সংক্রমিত (অনুপ্রবেশ) হয়। এ ভাইরাসের আক্রমণে শ্বসন জটিলতায় মানুষসহ গৃহপালিত পশুপাখির মৃত্যু ঘটে।
৯। সম্প্রতি SARS (Severe Acute Respiratory Syndrome) ভাইরাসের কারণে চীন, তাইওয়ান, কানাডা প্রভৃতি দেশে বহু লোকের মৃত্যু হয়েছে। MERS (Middle East Respiratory Syndrome) ভাইরাসও একটি মারাত্মক ভাইরাস।
৮। ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে পার্থক্য লিখুন ?
উত্তরঃ
১। ভাইরাস হলো এক প্রকার অতিক্ষুদ্র জৈব কণা বা অণুজীব যারা জীবিত কোষের ভিতরেই মাত্র বংশবৃদ্ধি করতে পারে। অন্যদিকে ব্যাকটেরিয়া (Bacteria) হলো এক প্রকারের আদি নিউক্লিয়াসযুক্ত, অসবুজ, এককোষী অণুজীব।২। ভাইরাসে DNA অথবা RNA যেকোনো একটি থাকে।ক্যাপসিডের মধ্যে অবস্থান করে। অন্যদিকে ব্যাকটেরিয়ার DNA ও RNA উভয়ই থাকে।ক্যাপসিডের মধ্যে অবস্থান করে না।
৩। ব্যাকটেরিয়া জীবন্ত জিনিস। অন্যদিকে ভাইরাস তাদের নিজের উপর নির্ভর করতে পারে না।
৪। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে ব্যাকটেরিয়ার সহজেই মারা যায়। অন্যদিকে এন্টি ভাইরাসজনিত অ্যান্টিভাইরাস কেবল ভাইরাসগুলির প্রজনন হ্রাস করতে পারে এবং তাদের ধ্বংস করতে পারে না।
৫। রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া কোষকে ধ্বংস করে এমন টক্সিন উৎপন্ন করে। তারা খাবার বিষক্রিয়া এবং মেনিনজাইটিস , নিউমোনিয়া এবং যক্ষ্মা সহ অন্যান্য গুরুতর অসুস্থতা সৃষ্টি করতে পারে। অন্যদিকে ভাইরাসগুলি হলো রোগাক্রান্ত যা মুরগী, ফ্লু, রেবিজি , ইবোলা ভাইরাসের রোগ , জিকা রোগ এবং এইচআইভি / এইডস সহ বিভিন্ন রোগের কারণ হয়ে থাকে।
৬। ব্যাকটিরিয়া আন্তঃকোষীয় জীব। অন্যদিকে ভাইরাসগুলি অন্তঃকোষীয় জীব, যার অর্থ তারা হোস্ট কোষে প্রবেশ করে এবং বাস করে।
৭। ব্যাকটেরিয়া তাদের নিজস্ব বৃদ্ধি এবং প্রজনন ক্ষমতা আছে। এই কোষগুলি থেকে আরও বিভাজন তৈরি করা যেতে পারে। অন্যদিকে ভাইরাসগুলি নিজেদের দ্বারা বিভক্ত করার ক্ষমতা রাখে না, তারা অবিরাম প্রতিলিপি করে এবং অন্যান্য কোষকে আক্রমণ করে তাদের জিনগত তথ্য প্রেরণ করে।
৯। ৯। ভাইরাসজনিত কিছু রোগের নাম ও পোষকদেহ ও জীবাণুর নাম লিখুন৷
উত্তরঃ
ক) তামাকের মোজাইক রোগ – তামাক – Tobacco Mosaic virus
খ) ধানের টুংরো রোগ – ধান – Tungro virus
গ) AIDS – মানুষ – HIV ভাইরাস
ঘ) ডেঙ্গু/ ডেঙ্গী জ্বর – মানুষ – ফ্ল্যাভি ভাইরাস (Flavi virus)
ঙ) SARS – মানুষ – Nipah virus
চ) জলাতঙ্ক – মানুষ – র্যাবিস ভাইরাস (Rabis virus)
ছ) হাম – মানুষ – রুবিওলা ভাইরাস (Rubeola virus)
জ) জন্ডিস/লিভার ক্যান্সার – মানুষ – হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস (Hepatitis B)
ঝ) পা ও মুখের ক্ষত – গরু/ভেড়া/মহিষ – ‘ফুট অ্যান্ড মাউথ’ ভাইরাস
৯। ব্যাকটেরিওফাজ কাকে বলে ?
উত্তরঃ
Phage (ফাজ) একটি গ্রিক শব্দ যার বাংলা আভিধানিক অর্থ ভক্ষণ করা বা( to eat) এরা জীবদেহের অভ্যন্তরে সংক্রমণের মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি ঘটিয়ে জীবকে (পোষককে) ধ্বংস করে। (ব্যাকটেরিয়ার দেহাভ্যন্তরে (কোষের ভিতর) বংশ বৃদ্ধি ঘটিয়ে যারা ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে তাদেরকে ব্যাকটেরিওফাজ বলে। উদাহরণ- T2 ফাজ। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী দ্য হেরেলী ফেলিক্স (d’Herelle Felix) এই ভাইরাসকে ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস বা ব্যাকটেরিওফাজ বা ফাজ নামে অভিহিত করেন।
১০। ব্যাকটেরিয়া কাকে বলে ?
উত্তরঃ ব্যাকটেরিয়া (Bacteria) হলো আদি নিউক্লিয়াসযুক্ত, অসবুজ, এককোষী একদল আণুবীক্ষণিক জীব। Bacteria শব্দটি নব্য লাতিন ভাষার ব্যাকটেরিয়ামের (Bacterium) বহুবচন। এটি গ্রিক ব্যাকটেরিয়নের (Bakterion) লাতিন রূপ। ব্যাকটেরিয়নের অর্থ লাঠি, দণ্ড বা বেত। ব্যাকটেরিয়ার এমন নামকরণের কারণ প্রথম আবিষ্কৃত ব্যাকটেরিয়া দণ্ডাকৃতির ছিল। তবে ব্যাকটেরিয়া গোলাকার, বেলনাকার বা সর্পিল নানা আকৃতির হয়। ওলন্দাজ বিজ্ঞানী অ্যান্টনি ফন লিউয়েন হুক সর্বপ্রথম ১৬৭৫ সালে বৃষ্টির পানির মধ্যে নিজের তৈরি সরল অণুবীক্ষণযন্ত্রের নিচে ব্যাকটেরিয়া পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি এর নাম দেন ক্ষুদ্র প্রাণী।এ কারণে তাঁকে ব্যাকটেরিওলজির জনক বলা হয়। ১৮২৯ সালে জার্মান বিজ্ঞানী এরেনবার্গ ব্যাকটেরিয়া নাম দেন। ব্যাকটেরিয়া অত্যন্ত ছোট আকারের জীব। এটি সাধারণত ০.২ থেকে ৫ মাইক্রোমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
১১। ব্যাকটেরিয়ার শ্রেণিবিভাগ করুন ।
উত্তরঃ ব্যাকটেরিয়ার আকৃতিগত শ্রেণীবিভাগ
১। কক্কাস-Coccus
যে সব ব্যাকটেরিয়া দেখতে গোলাকার তাদেরকে কক্কাস ব্যাকটেরিয়া বলে। বিভিন্ন ধরনের কক্কাস ব্যাকটেরিয়া হলো-
(i) মাইক্রোকক্কাসঃ গোলাকার ব্যাকটেরিয়া গুলো একা একা বা পৃথক পৃথক ভাবে অবস্থান করলে তাকে মাইক্রোকক্কাস বলে। যেমন- Micrococcus denitrificans, Micrococcus aureus, Micrococcus flavus.
(ii) ডিপ্লোকক্কাসঃ গোলাকার ব্যাকটেরিয়া গুলো জোড়ায় জোড়ায় বা দুইটি করে একত্রে অবস্থান করলে তাকে ডিপোকক্কাস বলে। যেমন- Diplococcus pneumonia.
(ররর) স্ট্রেপ্টোকক্কাসঃ গোলাকৃতির ব্যাকটেরিয়া গুলো চেইন বা শৃঙ্খল আকারে অবস্থান করলে তাকে স্ট্রেপ্টোকক্কাস বলে। যেমন- Treptococcus lactis, Treptococcus strep and Treptococcus pyrogens.
(iv) টেট্রাকক্কাসঃ গোলাকার ব্যাকটেরিয়া কোষগুলো দুইটি ভিন্ন তলে বিভাজিত হয়ে চারটি করে একত্রে অবস্থান করলে তাকে টেট্রাকক্কাস বলে। যেমন- Gaffkyacoccus tetragena, Tetracoccus sp.
(v) স্ট্যাফাইলোকক্কাসঃ গোলাকৃতির ব্যাকটেরিয়া গুলো একত্রে আঙ্গুরের থোকার মতো অবস্থান করলে তাকে স্ট্যাফাইলোকক্কাস বলে। যেমন- Staphylococcus aureus.
(vi) সারসিনাঃ নির্দিষ্ট সংখ্যক গোলাকার ব্যাকটেরিয়া কোষ নিয়মিত ভাবে সাজানো থাকলে তাকে সারসিনা বলে। যেমন- Sarcina lutea.
২। ব্যাসিলাস বা দন্ডাকার
যে সব ব্যাকটেরিয়া দেখতে দন্ড আকৃতির তাদেরকে ব্যাসিলাস বলে। বিভিন্ন ধরনের ব্যাসিলাস হলো-
(i) মনোব্যাসিলাসঃ দন্ডাকৃতির ব্যাকটেরিয়া গুলো একক ভাবে অবস্থান করলে তাকে মনোব্যাসিলাস বলে। যেমন- Bacillus albus, Escherichia coli.
(ii) ডিপ্লোব্যাসিলাসঃ দন্ডাকৃতির ব্যাকটেরিয়া গুলো জোড়ায় জোড়ায় অবস্থান করলে তাকে ডিপ্লোব্যাসিলাস বলে। Lactobacillus, Corynebacterium diptheriae, Moraxella lacunata, Diplobacillus.
(iii) স্ট্রেপটোব্যাসিলাসঃ দন্ডাকৃতির ব্যাকটেরিয়া গুলো চেইন বা শৃঙ্খল আকারে অবস্থান করলে তাকে স্ট্রেপটোব্যাসিলাস বলে। যেমন- Bacillus tuberculosis, Streptobacillus moniliformis.
(iv) প্যালিসেড ব্যাসিলাসঃ দন্ডাকৃতির ব্যাকটেরিয়া গুলো পাশাপাশি সমান্তরাল ভাবে অবস্থান করে অলিক টিস্যুর মতো গঠন সৃষ্টি করলে তাকে প্যালিসেড ব্যাসিলাস বলে। যেমন- Lampropedia sp.
(v) কক্কোব্যাসিলাসঃ ব্যাকটেরিয়া গুলো ঈষৎ লম্বা বা ডিম্বাকার হলে তাদেরকে কক্কোব্যাসিলাস বলে। যেমন- Salmonella, Mycobacterium, Coxiella burnetti.
৩। স্পাইরিলামঃ যে সব ভাইরাস দেখতে প্যাঁচানো বা কুন্ডালাকার তাদেরকে স্পাইরিলাম ব্যাকটেরিয়া বলে। যেমন- Spirillum minus, Treponema.
৪। কমাকৃতি ব্যাকটেরিয়াঃ যে সব ব্যাকটেরিয়া দেখতে কমাকৃতির অর্থাৎ দেহ খানিকটা পাক খাওয়ানো তাদেরকে কমাকৃতি ব্যাকটেরিয়া বলে। যেমন- Vibrio cholera.
৫। প্লিওমরফিকঃ যে সব ব্যাকটেরিয়ার সুনির্দিষ্ট আকৃতি নাই তাদেরকে প্লিওমরফিক বা বহুরুপী বা pleomorphic ব্যাকটেরিয়া বলে। যেমন- Rhizobium mayense.
৬। বর্গাকৃতির ব্যাকটেরিয়াঃ চার বাহু বিশিষ্ট বর্গাকার ব্যাকটেরিয়াকে বর্গাকৃতির ব্যাকটেরিয়া বলে। যেমন- Haloquadratum.
৭। তারকাকৃতি ব্যাকটেরিয়াঃ যে সব ব্যাকটেরিয়া দেখতে তারকা বা নক্ষত্রের মতো তাদেরকে তারকাকৃতি ব্যাকটেরিয়া বলে। যেমন- Stella humosa, Stella vacuolata.
৮। হাইফা বা অণুসূত্রাকার ব্যাকটেরিয়াঃ যে সব ব্যাকটেরিয়া পাতলা প্রাচীরবিশিষ্ট দীর্ঘ অণুসূত্র আকৃতির হয় তাদেরকে অণুসূত্রাকার ব্যাকটেরিয়া বলে। যেমন- Candidatus savagella, Streptomyces.
অক্সিজেন গ্রহণের ভিত্তিতে শ্রেণীবিভাগ
অক্সিজেনের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির ভিত্তিতে ব্যাকটেরিয়াকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১। বায়ুজীব ব্যাকটেরিয়াঃ যে সব ব্যাকটেরিয়া অক্সিজেনের উপস্থিতি ছাড়া বেঁচে থাকতে পারে না তাকে বায়ুজীবী ব্যাকটেরিয়া বলে। যেমন- Bacillus anthracis, Azobacter beijerinckii.
২। অবায়ুজীব ব্যাকটেরিয়াঃ যে সব ব্যাকটেরিয়া অক্সিজেনের উপস্থিতি ছাড়া বেঁচে থাকতে পারে তাকে অবায়ুজীবী ব্যাকটেরিয়া বলে। যেমন- Clostridium tetani.
তাপ সহনশীলতার ভিত্তিতে শ্রেণীবিভাগ
তাপ সহনশীলতার ভিত্তিতে ব্যাকটেরিয়াকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
১। সাইক্রোফিলিকঃ যে সব ব্যাকটেরিয়া নিম্ন তাপমাত্রায় বেঁচে থাকে তাকে Psychrophilic ব্যাকটেরিয়া বলে। শুন্য বা তার চেয়ে কম তাপমাত্রায় এ সব ব্যাকটেরিয়া বাঁচতে পারে। এদের সবচেয়ে ভাল বৃদ্ধির জন্য ২৫-৩০ ডিগ্রী সে. তাপমাত্রা উত্তম। যেমন- Psychrobacter, Acinetobacter, Arthrobacter, Pseudomonas.
২। মেসোফিলিকঃ যে সব ব্যাকটেরিয়া স্বাভাবিক তাপমাত্রায় বেঁচে থাকে তাকে Mesophilic ব্যাকটেরিয়া বলে। এদের সবচেয়ে ভাল বৃদ্ধির জন্য ৩০-৪০ ডিগ্রী সে. তাপমাত্রা উত্তম। যেমন- Azotobacter, Rhizobium.
৩। থার্মোফিলিকঃ যে সব ব্যাকটেরিয়া উচ্চ তাপমাত্রায় বেঁচে থাকে তাকে Thermophilic ব্যাকটেরিয়া বলে। এদের সবচেয়ে ভাল বৃদ্ধির জন্য ৪৫-৬০ ডিগ্রী সে. তাপমাত্রা উত্তম। যেমন- Thermus aquaticus, Bacillus coagulans.
১২৷ গ্রাম পজেটিভ ও গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া কাকে বলে ?
উত্তরঃ
ক) গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়াঃ যে সব ব্যাকটেরিয়াকে ক্রিস্টাল ভায়োলেট রঞ্জকে রঞ্জিত করার পর ধৌত করলে রঞ্জক ধরে রাখে (ব্লু, পার্পল) তাকে গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়া বলে। এদের কোষপ্রাচীর পুরু। এর কোষপ্রাচীরে পেপটাইডোগ্লাইকন, টিকোয়িক এসিড ও পাতলা লাইপোপলিস্যাকারাইড থাকে। যেমন– Clostridium, Staphylococcus, Streptococcus, Bacillus, Actinobacteria.
খ) গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়াঃ যে সব ব্যাকটেরিয়াকে ক্রিস্টাল ভায়োলেট রঞ্জকে রঞ্জিত করার পর ধৌত করলে রঞ্জক ধরে রাখতে পারে না তাকে গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া বলে। এদের কোষপ্রাচীর পাতলা। এর কোষপ্রাচীরে পেপটাইডোগ্লাইকন ও পুরু লাইপোপলিস্যাকারাইড থাকে। E. coli, Salmonella typhi, Shigella, Proteus, Rhizobium, Vibrio cholerae, Neisseria meningitidis, Cyanobacteria.
১৩। ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে পার্থক্য লিখুন।
১৪। DNA ভাইরাস ও RNA ভাইরাসের মধ্যে পার্থক্য লিখুন ।
আরো জানুন