অধ্যায় – ০৮ ( জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশবিদ্যা (Biodiversity and Ecology)
১। জীববৈচিত্র্য কাকে বলে ?
উত্তরঃ প্রকৃতির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন অঞ্চলে বংশবিস্তার করে টিকে থাকার উদ্দেশ্যে জীবের বিভিন্ন প্রজাতির বহিঃঅঙ্গসংস্থান ও অন্তঃঅঙ্গসংস্থান, আকার, আকৃতি, প্রকৃতি ইত্যাদির প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাধন করে অভিযোজিত হওয়ার ফলে জীবদের মধ্যে যে বৈচিত্র্যময়তার উদ্ভব ঘটে তাকে জীব বৈচিত্র্য ( Biodiversity )বলে।
২। কয়েকটি বিদেশি উদ্ভিদের নাম লিখুন ।
উত্তরঃ রেইন ট্রি, কৃষ্ণচূড়া, সেগুন, আকাশমনি, ইউক্যালিপটাস , মেহগনি ।
৩। ইন – সিটু ও এক্স – সিটু সংরক্ষণ কাকে বলে ?
উত্তরঃ . বন্যপ্রাণি স্বস্থানে সংরক্ষণ বা ইনসিটু সংরক্ষণ (Insitu
Conservation of wildlife) :-
যে পরিবেশে কোন প্রজাতির জন্ম হয় সেখানেই তাকে সংরক্ষণ করাকে ইনসিটু কনজারভেশন বলা হয়।
উদাহরণ – ইকোপার্ক, সংরক্ষিত বন এবং গেম রিজার্ভ হল ইন-সিটু সংরক্ষণের উদাহরণ।
এক্স-সিটু কনজারভেশন (Ex-Situ Conservation) :-
জীববৈচিত্র্যের উপাদানসমূহকে তাদের মূল বাসস্থান বা প্রাকৃতিক
পরিবেশের বাইরে বাঁচিয়ে রাখাই হলো এক্স-সিটু কনজারভেশন।
উদাহরণ – উদ্ভিদ উদ্যান হল এক্স-সিটু সংরক্ষণের একটি উদাহরণ ।
৪। ইকোপার্ক কাকে বলে ?
উত্তরঃ একটি প্রাকৃতিক শোভামণ্ডিত এলাকা
যেখানে পর্যটকরা প্রকৃতিবান্ধব পরিবেশে নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে এবং একই সাথে উক্ত এলাকার জীববৈচিত্র্যও সংরক্ষিত হবে তা ইকোপার্ক নামে পরিচিত। যেমন- সীতাকুন্ড ইকোপার্ক (চট্টগ্রাম), মধুটিলা ইকোপার্ক ( শেরপুর ) মাধবকুন্ড ইকোপার্ক (মৌলবীবাজার), বঙ্গবন্ধু যমুনা ইকোপার্ক প্রভৃতি।
৫। সাফারি পার্ক কী ?
উত্তরঃ সাফারি পার্কে বন্যপ্রাণীসমূহ উন্মুক্ত
অবস্থায় বনজঙ্গলে বিচরণ করে এবং মানুষ সতর্কতার সাথে চলমান যানবাহনে আবদ্ধ জীবজন্তুসমূহ পরিদর্শন করে থাকে। অর্থাৎ সাফারি পার্ক হলো চিড়িয়াখানার বিপরীত এবং একে 200 Without Cages বলা হয়। যেমন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক (ডুলাহাজারা) ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক (গাজীপুর)।
৬। অভয়ারণ্য কী ?
উত্তরঃ যে সংরক্ষিত অঞ্চলে গাছপালার সঙ্গে বিশেষ কোনো বন্য প্রজাতির রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা আছে, তাকে অভয়ারণ্য বলে।
বাংলাদেশে ৮ টি অভয়ারণ্য আছে । কয়েকটি নাম দেওয়া হলো –
হাজারিখিল অভয়ারণ্য – চট্টগ্রাম
সুন্দরবন বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য – বাগেরহাট
পাবলাখালি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য – পার্বত্য খাগড়াছড়ি
৭। সীড ব্যাংক কী ?
উত্তরঃ বীজের সংরক্ষণাগারকে। বীজ ব্যাংক বলে। পুষ্পক উদ্ভিদের প্রায় ৭০% বীজ শুকিয়ে ২০০ সে. তাপমাত্রায় শতাব্দীর পর শতাব্দী অঙ্কুরোদগম ক্ষমতাসমূহ সংরক্ষণ করা যায়। যেমন- ধান, গম, ভুট্টা ইত্যাদি।
৮। ম্যানগ্রোভ বন কাকে বলে ?
উত্তরঃ সাধারণত যেসব বনাঞ্চল উপকূলীয়
অঞ্চলে জোয়ারভাটার মধ্যে গড়ে উঠে সেসব বনাঞ্চলকে ম্যানগ্রোভ বন বা উপকূলীয় বনাঞ্চল বলা হয়। যেমন: বাংলাদেশের সুন্দরবন পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন বলে।
৯। বাস্তুতন্ত্র কাকে বলে ?
উত্তরঃ বাস্তুতন্ত্র (Ecosystem) হচ্ছে জৈব, অজৈব পদার্থ ও বিভিন্ন জীবসমন্বিত এমন প্রাকৃতিক একক যেখানে বিভিন্ন জীবসমষ্টি পরস্পরের সাথে এবং তাদের পারিপার্শ্বিক জৈব ও অজৈব উপাদানের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে একটি জীবনধারা গড়ে তোলে।
১০। উৎপাদক কাকে বলে ?
উত্তরঃ যে-সমস্ত সবুজ উদ্ভিদ (ক্লোরােফিলযুক্ত) সূর্যালােক গ্রহণ করে সালােকসংশ্লেষ পদ্ধতিতে নিজেদের দেহে খাদ্য উৎপন্ন করে খাদ্যশৃঙ্খলের ভিত্তি রচনা করে, তাদের উৎপাদক বলে।
১১। বিয়োজক কাকে বলে ?
উত্তরঃ বিয়োজক কাকে বলে যেসব অণুখাদক ( আণুবীক্ষণিক ব্যাকটেরিয়া , ছত্রাক প্রভৃতি ) তাদের শরীরের এনজাইমকে মৃত উদ্ভিদ ও জীবদেহের ওপর ঢেলে পচিয়ে দেয় এবং মৃত জীবদেহের কলায় অবস্থিত জটিল যৌগগুলিকে ভেঙে কিছুটা
নিজেদের পুষ্টির জন্য শোষণ করে ও বাকি অংশকে সরল যৌগে (লবণ , জৈব বা অজৈব পদার্থ ) পরিণত করে প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দেয় তাদেরকে বিয়ােজক বা মৃতজীবী বলা হয় ।
১২। ফাইটোপ্লাংটন ও জুয়োপ্লাংটন কী ?
ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন হল ক্ষুদ্র প্রবাহিত উদ্ভিদ যা তাদের নিজস্ব খাদ্য সালোকসংশ্লেষ করে। সবুজ শেত্তলাগুলি যা আপনি জলের দেহের পৃষ্ঠে দেখতে পান তা একটি ভাল উদাহরণ। জুপ্ল্যাঙ্কটন হল ক্ষুদ্র প্রবাহমান প্রাণী যারা গাছপালা এবং প্রাণী খায় এবং তাদের খাদ্যের জন্য ক্ষয়কারী পদার্থ ।
১৩। বাংলাদেশের ৪ টি বিলুপ্ত প্রায় উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম লিখুন।
উত্তরঃ বিলুপ্ত প্রায় উদ্ভিদের নাম:
১. টালিপাম (Corypha taliera Roxb.)
২. মল্লিকা বঝাঁজি (Aldrovanda vesiculosa L.)
৩. ক্ষুদে বড়লা (Knema bengalensis)
৪. রোটেলা (Rotala simpliciuscula)
৫. কোরুদ (Licuala peltata)
১৪। বাংলাদেশের বিলুপ্তপ্রায় ৪ টি প্রাণীর নাম লিখুন।
উত্তরঃ
১. ঘড়িয়াল (Gavialis gangeticus)
২. মিঠাপানির কুমির (Crocodylus palustris)
৩. রাজশকুন (Torgos calvus)
৪. নীল গা (Boselaphus tragocamelus)
৫. শুশুক (Platanista gangetica)
১৫। সুন্দরবনের ৪ টি উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম লিখুন।
উত্তরঃ
১. সুন্দরী- Heritiera fomes
২. গোলপাতা- Nipa fruticans
৩. গরান- Ceriops roxburghii
৪. আমুর- Amoora cucuilara
১৬। সুন্দরবনের ৫ টি প্রাণীর বৈজ্ঞানিক নাম লিখুন।
উত্তরঃ
১. Panthera tigris (রয়েল বেঙ্গল টাইগার)
২. Cervus axis (চিত্রা হরিণ)
৩. Mantiacus mentjak (মায়া হরিণ)
8. Scotophilus kohli (হলদে বাদুড়)
৫. Naja naja (গোখরা)
১৭। খাদ্যশৃঙ্খল বা ফুড চেইন কাকে বলে?
উত্তরঃ কোনো বাস্তুতন্ত্রে খাদ্য-খাদকের সম্পর্কের ভিত্তিতে উৎপাদক স্তর থেকে খাদক স্তরের সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত ধাপে ধাপে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জীবগোষ্ঠীর মধ্যে খাদ্যের মাধ্যমে শক্তির শৃঙ্খলিত ধারাবাহিক প্রবাহকেই খাদ্যশৃঙ্খল বলা হয়। যেমন-
খাদ্যশৃঙ্খল: ঘাস – ঘাসফড়িং – গিরগিটি – বাজপাখি
১৮। খাদ্যজাল কাকে বলে?
উত্তরঃ বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে বিভিন্ন খাদ্য-খাদক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা খাদ্যশৃঙ্খলগুলি নানাভাবে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হলে, পরিবেশে বিভিন্ন খাদ্যশৃঙ্খলের মধ্যে খাবারের আদান-প্রদানকে কেন্দ্র করে যে জাল গড়ে ওঠে তাকে খাদ্য জাল বা খাদ্যজালিকা বা ফুড ওয়েব (Food Web) বলে।
১৯। ইকোলজিক্যাল পিরামিড কাকে বলে ?
উত্তরঃ কোন এলাকায় খাদ্যশৃঙ্খলের বিভিন্ন স্তরের প্রাণীদের সংখ্যা, তাদের ভর ও খাদ্য গ্রহনের পরে এক স্তর থেকে পরের স্তরে কতটুক শক্তি প্রবাহিত হচ্ছে তার উপর ভিত্তি করে উৎপাদক থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ স্তরের খাদক পর্যন্ত প্রাণীদের কে সাজালে একটি সুন্দর পিরামিড আকারের নকশা পাওয়া যায়। একে ইকোলজিক্যাল পিরামিড বলে।
২০। বাস্তুতন্ত্রের উপাদানগুলো লিখুন।
উত্তরঃ অজীব এবং জীব এই দুটি প্রধান উপাদান নিয়ে বাস্তুতন্ত্র গঠিত।
অজীব উপাদান : বাস্তুতন্ত্রের প্রাণহীন সব উপাদান অজীব উপাদান নামে পরিচিত। এই অজীব উপাদান আবার দুই ধরনের। (ক) অজৈব বা ভৌত উপাদান এবং (খ) জৈব উপাদান।
জীব উপাদান : পরিবেশের সকল জীবন্ত অংশই বাস্তুতন্ত্রের জীব উপাদান
বাস্তুতন্ত্রকে কার্যকরী রাখার জন্য এ সকল জীব যে ধরনের ভূমিকা রাখে তার উপর ভিত্তি করে এসব জীব উপাদানকে (ক) উৎপাদক, (খ) খাদক এবং (গ) বিযোজক এ তিন ভাগে ভাগ করা হয়।
প্রথম স্তরের খাদক : যে সকল প্রাণী উদ্ভিদভোজী তারা প্রথম স্তরের খাদক। এরা তৃণভোজী নামেও পরিচিত। তৃণভোজী প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে ছোট কীটপতঙ্গ থেকে শুরু করে অনেক বড় প্রাণী। যেমন— গরু, ছাগল ইত্যাদি।
দ্বিতীয় স্তরের খাদক : যারা প্রথম স্তরের খাদকদেরকে খেয়ে বাঁচে। যেমন- পাখি, ব্যাঙ, মানুষ ইত্যাদি। এরা মাংসাশী বলেও পরিচিত।
তৃতীয় স্তরের খাদক বা সর্বোচ্চ খাদক : যারা দ্বিতীয় স্তরের খাদকদের খায়। যেমন- কচ্ছপ, বক, ব্যাঙ, মানুষ ইত্যাদি। এদের মধ্যে কোনো কোনো প্রাণী আবার একাধিক স্তরের খাবার খায়। এদেরকে বলা হয় সর্বভুক। আমরা যখন ডাল, ভাত, আলু ইত্যাদি খাই, তখন আমরা প্রথম স্তরের খাদক। আবার আমরা যখন মাছ, মাংস খাই, তখন আমরা দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্তরের খাদক।