কোষ, কোষ বিভাগ ও টিস্যু –
১। প্রাণিবিজ্ঞানের জনক কে ?
উত্তরঃ এরিস্টটল ।
২। উদ্ভিদ বিজ্ঞানের জনক কে ?
উত্তরঃ থিওফ্রাস্টাস ।
৩। বিবর্তনবাদের জনক কে?
উত্তরঃ চার্লস ডারউইন৷
৪। জেনেটিক্সের বা বংশগতিবিদ্যার জনক কে ?
উত্তরঃ গ্রেগর জোহান মেন্ডেল ।
৫। ট্যাক্সোনমির বা শ্রেণিবিন্যাসের জনক কে?
উত্তরঃ ক্যারোলাস লিনিয়াস।
৬। কোষ কাকে বলে ?
উত্তরঃ Jean Brachet (1961) এর মতে – ‘কোষ(Cell) হলো জীবের গঠনগত মৌলিক একক’।
Loewy and Siekevitz (1969) এর মতে – ‘কোষ হলো জৈবিক ক্রিয়াকলাপের একক যা একটি অর্ধভেদ্য ঝিল্লি দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে এবং যা অন্য কোনো সজীব মাধ্যম ছাড়াই আত্ম-জননে সক্ষম’।
De Roberties (1979) এর মতে – ‘কোষ হলো জীবের মৌলিক গঠনগত ও কার্যগত একক।
৬। কোষ কত প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ শারীরবৃত্তীয় কাজের ভিত্তিতে কোষের প্রকারভেদ –
ক) দেহকোষ ( মাইটোসিস বিভাজন হয় )
খ) জননকোষ ( মায়োসিস বিভাজন হয় )
নিউক্লিয়াসের গঠনের ভিত্তিতে কোষের প্রকারভেদ –
ক) আদিকোষ – উদাহরণ : মাইকোপ্লাজমা, ব্যাকটেরিয়া, ও সায়ানোব্যাকটেরিয়া।
খ) প্রকৃতকোষ – জড় কোষপ্রাচীর বিশিষ্ট প্রকৃত কোষই প্রকৃত উদ্ভিদকোষ। শৈবাল, ছত্রাক, বায়োফাইটস, জিমনোস্পার্মস এবং এনজিওস্পার্মস ইত্যাদি সব উদ্ভিদই প্রকৃত কোষ দিয়ে গঠিত এবং সকল প্রাণিকোষ প্রকৃত কোষ।
৭। উদ্ভিদকোষ ও প্রাণিকোষ কাকে বলে ?
উত্তরঃ
উদ্ভিকোষ : কোষের বাইরে শক্ত সেলুলোজ নির্মিত কোষ প্রাচীর থাকে। পরিণত কোষে কেন্দ্রে বড় কোষ গহ্বর ও সাইটোপ্লাজমে ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে। পরিণত কোষের গঠন সাধারণত গোলাকার, ডিম্বাকার হয়ে থাকে। সঞ্চিত খাদ্য শ্বেতসার। সাধারণত সেন্ট্রোসোম থাকে না।
প্রাণিকোষ : এদের কোষে কোষপ্রাচীর থাকে না এবং কোষ গহ্বর অনুপস্থিত, থাকলেও অতি ক্ষুদ্রাকৃতির, ক্লোরোপ্লাস্ট অনুপস্থিত। কোষে সেন্ট্রোসোম থাকে। সঞ্চিত খাদ্য চর্বি ও গ্লাইকোজেন।
৮। কোষ কে আবিষ্কার করেন ?
উত্তরঃ ১৬৬৫ : আদি প্রকৃতির একটি অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করে রবার্ট হুক প্রথমে কর্ক কোষ আবিষ্কার করেন।
৯। জাইগোট কাকে বলে ?
উত্তরঃ পুং এবং স্ত্রী জনন কোষের মিলনের ফলে যে কোষ উৎপন্ন হয় তাকে জাইগোট বলে ।
১০। কোষ বিভাজন কাকে বলে ও কত প্রকার ?
উত্তরঃ যে প্রক্রিয়ায় জীব কোষের বিভাজনের মাধ্যমে একটি থেকে দুটি বা চারটি কোষের সৃষ্টি হয় তাকে কোষ বিভাজন বলে।
কোষ বিভাজন ৩ প্রকার। যথা –
ক) অ্যামাইটোসিস
খ) মাইটোসিস
গ) মায়োসিস
১১। অ্যামাইটোসিস কোষ বিভাজনকে কেন প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন বলে?
উত্তরঃ এ ধরনের বিভাজনে মাতৃকোষের নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম সরাসরি বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য কোষ সৃষ্টি করে তাই একে প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন বলে।
১২। মাইটোসিস কোষ বিভাজন কাকে বলে ?
উত্তরঃ যে প্রক্রিয়ায় মাতৃকোষের নিউক্লিয়াস একবার বিভাজিত হয়ে সম আকৃতির, সমগুনসম্পন্ন সমসংখ্যক ক্রোমোজোম বিশিষ্ট দুটি অপত্য কোষ সৃষ্টি হয় তাকে মাইটোসিস কোষ বিভাজন বলে।
১২। মিয়োসিস কোষ বিভাজনকে হ্রাসমূলক বিভাজন বলা হয় কেন?
উত্তরঃ এ ধরনের কোষ বিভাজনে অপত্য কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা, মাতৃকোষের ক্রোমোজোম সংখ্যার অর্ধেক হয়ে যায়। ক্রোমোজোম সংখ্যা অর্ধেক হ্রাস পায় বলে মিয়োসিস কোষ বিভাজনকে হ্রাসমূলক বিভাজন বলে।
১৩। উদ্ভিদের কোষ প্রাচীর কি দিয়ে তৈরী ?
উত্তরঃ সেলোলোজ ।
১৪। ছত্রাকের কোষ প্রাচীর কি দিয়ে নির্মিত?
উত্তরঃ কাইটিন।
১৫৷ নিউক্লিয়াস যে আবিষ্কার করেন ?
উত্তরঃ রবার্ট ব্রাউন(Robert Brown) সর্বপ্রথম ১৮৩১ সালে কোষে নিউক্লিয়াস দেখতে পান এবং এর নামকরণ করেন। তিনিই এটি আবিষ্কার করেন সর্বপ্রথম।
১৬। নিউক্লিয়াস কাকে বলে ?
উত্তরঃ প্রোটোপ্লাজমের সবচেয়ে ঘন, পর্দাঘেরা এবং প্রায় গোলাকার অংশকে নিউক্লিয়াস বলে।
১৭। কোষের শক্তিঘর কাকে বলা হয় ?
উত্তরঃ মাইটোকন্ড্রিয়া ( এখানে শ্বসন ঘটে )
১৮৷ প্রোটিন তৈরির কারখানা কাকে বলা হয় ?
উত্তরঃ রাইবোজোমকে।
১৯। প্লাস্টিড কাকে বলে ও কত প্রকার ?
উত্তরঃ প্লাস্টিড উদ্ভিদকোষের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গাণু। প্লাস্টিডের প্রধান কাজ খাদ্য প্রস্তুত করা, খাদ্য সঞ্চয় করা এবং উদ্ভিদদেহকে বর্ণময় করে পরাগায়নে সাহায্য করা। প্লাস্টিড তিন ধরনের—ক্লোরোপ্লাস্ট, ক্রোমোপ্লাস্ট ও লিউকোপ্লাস্ট। প্লাস্টিড আবিষ্কার করেন আর্নস্ট হেকেল।
২০। ক্রোমোজোম কাকে বলে ?
উত্তরঃ ক্রোমোজোম হলো একটি দীর্ঘ ডিএনএ অণু যাতে একটি জীবের জিনগত উপাদানের একটি অংশ বা সমস্ত অংশ বিদ্যমান থাকে।
মানুষের প্রতিটি কোষে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম থাকে, যার মধ্যে ২২ জোড়া স্বয়ংক্রিয় ক্রোমোজোম এবং একটি জোড়া যৌন ক্রোমোজোম থাকে। পুরুষদের যৌন ক্রোমোজোম হল XY এবং মহিলাদের যৌন ক্রোমোজোম হল XX।
২১। নিউক্লিক কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি ?
উত্তরঃ নিউক্লিক এসিড হল নিউক্লিওটাইডের পলিমার। নিউক্লিওটাইড হল একটি জৈব অণু যা তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত: একটি নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষারক, একটি সুগার এবং একটি ফসফেট গ্রুপ। নিউক্লিক এসিডের দুটি প্রধান প্রকার রয়েছে: ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড (DNA) এবং রাইবোনিউক্লিক এসিড (RNA)। DNA হল জীবের জিনোমের প্রধান উপাদান, যা কোষের ক্রোমোজোমে পাওয়া যায়। RNA প্রোটিন সংশ্লেষণ এবং অন্যান্য জৈবিক প্রক্রিয়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২২। বংশগতির ধারক ও বাহক কাকে বলা হয়?
উত্তরঃ ক্রোমোজোম।
২৩। DNA কে মাস্টার মলিকিউল কেন বলা হয়?
উত্তরঃ DNA-অণু জীবকোষের সকল রাসায়নিক বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে, তাই DNA অণুকে মাস্টার মলিকিউল (Master molecule)।
২৪৷ ডাবল হেলিক্স মডেল কী ?
উত্তরঃ ১৯৫৩ সালে আমেরিকান বিজ্ঞানী ওয়াটসন (James D. Watson) এবং ইংরেজি বিজ্ঞানী ক্রিক (Francis Crick) DNA অণুর ভৌত গঠনের একটি মডেল বর্ণনা করেন। এ মডেলটি DNA অণুর ডবল ‘হেলিক্স মডেল’ নামে পরিচিত। এ মডেল বর্ণনার সময় বিজ্ঞানী Frederick Wilkins-এর X-ray deffraction চিত্রের সাহায্য নেয়া হয়। DNA অণুর ডবল হেলিক্স মডেল বর্ণনার জন্য ওয়াটসন, ক্রিক ও উইলকিন্স ১৯৬৩ সালে নোবেল পুরস্কার পান।
২৫। কোষ চক্র কাকে বলে ?
উত্তরঃ একটি বর্ধিষ্ণু কোষের জীবন শুরু হয় মাতৃকোষের বিভাজনের মাধ্যমে এবং শেষও হয় বিভাজিত হয়ে অপত্য কোষ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে। কোষের এ বৃদ্ধির বিভিন্ন পর্যায় চক্রাকারে সম্পন্ন হয়। কোষ সৃষ্টি, এর বৃদ্ধি এবং পরবর্তীতে বিভাজন- এ তিনটি কাজ যে চক্রের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় তাকে কোষচক্র বলে। Howard & Pelc কোষচক্রের প্রস্তাব করেন।
২৬। সাইটোকাইনেসিস ও ক্যারিওকাইনেসিস কাকে বলে ?
উত্তরঃ সাইটোপ্লাজমের বিভাজনকে সাইটোকাইনেসিস এবং নিউক্লিয়াসের বিভাজনকে ক্যারিওকাইনেসিস বলে ।
২৭। হ্যাপ্লয়েড ও ডিপ্লয়েড কাকে বলে ?
কোষের অর্ধেক ক্রোমোজোম সংখ্যার অবস্থাকে হ্যাপ্লয়েড (n) বলে। যখন দুটি হ্যাপ্লয়েড কোষের মিলন ঘটে, তখন সে অবস্থাকে ডিপ্লয়েড (2n) বলে।
২৮। সাইটোপ্লাজম কাকে বলে ?
উত্তরঃ
২৯। প্রোটোপ্লাজম কাকে বলে ?
উত্তরঃ কোষের ভিতরে যে অর্ধস্বচ্ছ, থকথকে জেলির মতো বস্তু থাকে তাকে প্রোটোপ্লাজম বলে।
৩০। মাইটোকন্ড্রিয়া সম্পর্কে বলুন।
উত্তরঃ এ অঙ্গাণুটি 1898 সালে বেনডা (Benda) অবিষ্কার করেন।এটি দুই স্তরবিশিষ্ট আবরণী ঝিল্লি দিয়ে ঘেরা।
ভিতরের স্তরটি ভিতরের দিকে ভাঁজ হয়ে থাকে। এদের ক্রিস্টি (cristae) বলে।
ক্রিস্টির গায়ে বৃন্তযুক্ত গোলাকার বস্তু থাকে, এদের অক্সিজোম (onliomes) বলে।
অক্সিজোমে উৎসেচকগুলো (enzymes) সাজানো থাকে। মাইটোকন্ড্রিয়নের ভেতরে থাকে ম্যাট্রিক্স (matrix)। জীবের শ্বসনকার্যে সাহায্য করা মাইটোকন্ড্রিয়ার প্রধান কাজ।
৩১। সাইটোপ্লাজম কাকে বলে ?
উত্তরঃ প্রোটোপ্লাজম থেকে নিউক্লিয়াস বা কেন্দ্রিকাটিকে সরিয়ে দিলে যে জেলির মতো বস্তুটি থেকে যায় সেটিই সাইটোপ্লাজম।
৩২। কোষঝিল্লি বা প্লাজমালেমা কাকে বলে ?
উত্তরঃ প্রোটোপ্লাজমের বাইরে দুই স্তরের যে স্থিতিস্থাপক পর্দা থাকে, তাকে কোষঝিল্লি বা প্লাজমালেমা বলে। কোষঝিল্লির ভাঁজকে মাইক্লোভিলাই বলে। এটি প্রধানত লিপিড এবং প্রোটিন দিয়ে তৈরি।
৩৩। উদ্ভিদ কোষ ও প্রাণিকোষের মধ্যে পার্থক্য লিখুন ।
উত্তরঃ উদ্ভিদ এবং প্রাণী কোষের মূল পার্থক্য হল কোষপ্রাচীর । প্রাণী কোষে কোষপ্রাচীর থাকে না । আর একটি বড় পার্থক্য হল উদ্ভিদ কোষে একটি বড় কোষ গহ্বর থাকে। কিন্তু প্রাণী কোষের গহবরগুলো ছোট ছোট । এছাড়া প্রাণী কোষে গলগি বস্তু ও মাইক্রোভিলাই থাকে যা উদ্ভিদ কোষে থাকে না ।
৩৪। DNA ও RNA এর মধ্যে পার্থক্য লিখুন।
উত্তরঃ DNA ও RNA এর পার্থক্য :১। DNA হল ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড (Deoxy Ribonuclic Acid)। অপরদিকে, RNA হল রাইবো নিউক্লিক এসিড (Ribonucleic acid)।
২। DNA তে ডিঅক্সি রাইবোজ সুগার থাকে। পেন্টোজ সুগারের সাথে ক্ষারক থাকে এডেনিন, গুয়ানিন, সাইটোসিন ও থায়ামিন ।
অপরদিকে, RNA তে রাইবোজ সুগার থাকে। পেন্টোজ সুগার এর সাথে ক্ষারক থাকে এডেনিন, গুয়ানিন, সাইটোসিন ও ইউরাসিল।
৩। DNA এর ক্ষারকগুলো সর্বদাই হাইড্রোজেন বন্ধনী দ্বারা যুক্ত থাকে। অপরদিকে, RNA এর লুপ বা ভাঁজযুক্ত স্থানে ক্ষারকগুলো বন্ধনী দ্বারা যুক্ত; কিন্তু অন্যত্র বন্ধনীহীন।
৪। DNA নিউক্লিয়াসে অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমাণে থাকে। এটি ক্রোমোজোমের মূল উপাদান। তবে মাইটোকন্ড্রিয়া ও ক্লোরোপ্লাস্টেও পাওয়া যায়। অপরদিকে, RNA সাইটোপ্লাজমে অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমাণে থাকে। এটি রাইবোজোমের মূল উপাদান। তবে ক্রোমোজোমেও পাওয়া যায়।
৩৫। নিউক্লিওটাইড ও নিউক্লিওসাইড এর পার্থক্য লিখুন ।
উত্তরঃ ১. নিউক্লিওটাইড হলো নিউক্লিওসাইড এবং ফসফেট সমন্বয়ে গঠিত এক ধরনের জৈব যৌগ যা নিউক্লিক এসিড পলিমার ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড (DNA) ও রাইবোনিউক্লিক এসিড (RNA)-এর মনোমার হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে, নিউক্লিওসাইড হল কিছু গ্লাইকোসিল্যামাইন যা ফসফেট গ্রুপ ছাড়া নিউক্লিওটাইড হিসাবে ভাবা যেতে পারে। একটি নিউক্লিওসাইড কেবল একটি নিউক্লিওবেস এবং একটি পাঁচ-কার্বনযুক্ত শর্করা (রাইবোজ বা ২’-ডিঅক্সিরাইবোজ) নিয়ে গঠিত
২. নিউক্লিওটাইডের রাসায়নিক সংমিশ্রণে একটি ফসফেট গ্রুপ, একটি চিনি এবং একটি নাইট্রোজেনাস বেস থাকে। অন্যদিকে, একটি নিউক্লিওসাইডের একটি রাসায়নিক গঠন রয়েছে যা ফসফেট গ্রুপ ছাড়াই একটি চিনি এবং একটি বেস নিয়ে গঠিত।
৩. নিউক্লিওটাইড আজও ক্যান্সার সৃষ্টিকারী এজেন্টদের অন্যতম প্রধান কারণ। অন্যদিকে, নিউক্লিওসাইড গুলি ওষুধে এজেন্ট হিসাবে ব্যবহৃত হয় যা প্রাথমিকভাবে ভাইরাস এবং ক্যান্সার সৃষ্টিকারী এজেন্টদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়।
৪. নিউক্লিওটাইড ফস্ফেট গ্রুপ একটি অস্থায়ী ফস্ফেট ইয়োন যা অ্যাডেনোসিন ট্রাইফস্ফেট, সাধারণত অস্থায়ী হাইড্রোজেনফস্ফেট (HPO4) বা ফস্ফরিক অ্যাসিড (H3PO4) সংযুক্ত হয়ে থাকে। অন্যদিকে, নিউক্লিওসাইডে কোনো ফস্ফেট গ্রুপ নেই।
৫. নিউক্লিওটাইডের কিছু প্রধান উদাহরণ হল অ্যাডেনোসিন, গুয়ানোসিন ইত্যাদি। অন্যদিকে, নিউক্লিওসাইডের কিছু মূল উদাহরণ শুধুমাত্র ফসফেট গ্রুপের যোগে নিউক্লিওটাইডের মতোই।
৩৬। টিস্যু কাকে বলে ?
উত্তরঃ একই উৎস থেকে সৃষ্ট, একই ধরণের কাজ সম্পন্নকারী, সমধর্মী অবিচ্ছিন্ন কোষগুচ্ছকে টিস্যু বলে।
৩৭। টিস্যু কত প্রকার ও কী কী? ( উদ্ভিদ টিস্যু )
উত্তরঃ টিস্যু দুই প্রকার –
১। ভাজক টিস্যু (Merismatic tissue) : যে কোষগুলো বিভাজিত হয় তা হল ভাজক কোষ, আর ভাজক কোষ দিয়ে গঠিত টিস্যুই ভাজক টিস্যু। ভাজক টিস্যুর অপর নাম মেরিস্টেম।
২। স্থায়ী টিস্যু (Permanent tissue) : যে টিস্যুর কোষগুলো বিভাজনে অক্ষম সে টিস্যুকে স্থায়ী টিস্যু বলে। এ টিস্যুর কোষগুলো পূর্ণভাবে বিকশিত এবং সঠিক আকার-আকৃতি বিশিষ্ট অর্থাৎ এরা আকার-আকৃতি ও বিকাশে স্থায়িত্ব লাভ করেছে, তাই এরা স্থায়ী টিস্যু। বিশেষ অবস্থা ছাড়া এরা আর বিকশিত হতে পারে না। ভাজক টিস্যু হতে কোষের পূর্ণ বিকাশ লাভের পর বিভাজন ক্ষমতা স্থগিত হওয়ার মাধ্যমে স্থায়ী টিস্যুর উদ্ভব হয়।
৩৮। প্রাণী টিস্যু কত প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ প্রাণিটিস্যুর প্রকারভেদ: প্রাণীটিস্যু তার গঠনকারী কোষের সংখ্যা, বৈশিষ্ট্য এবং তাদের নিঃসৃত পদার্থের বৈশিষ্টের ভিত্তিতে প্রধানত চার ধরণের হয়-
(a) আবরণী টিস্যু
(b) যোজক টিস্যু
(c) পেশি টিস্যু এবং
(d) স্নায়ু টিস্যু।
৩৯। অস্থি ও তরুণাস্থি কী ?
উত্তরঃ কোমলাস্থি (Cartilage): কোমলাস্থি এক ধরনের নমনীয় স্কেলিটাল যোজক টিস্যু। মানুষের নাক ও কানের পিনা কোমলাস্থি দিয়ে তৈরি।
অস্থি: অস্থি বিশেষ ধরনের দৃঢ় ভঙ্গুর এবং অনমনীয় স্কেলিটাল কানেকটিভ টিস্যু। এদের মাতৃকায় ক্যালসিয়াম জাতীয় পদার্থ জমা হয়ে অস্থির দৃঢ়তা প্রদান করে।
৪০। তরল যোজক কত প্রকার ও কী কী ?
উত্তরঃ তরল যোজক টিস্যু দুই ধরনের,
রক্ত এবং
লসিকা।
রক্ত (Blood):
রক্ত এক ধরনের ক্ষারীয়, ঈসৎ লবণাক্ত এবং লালবর্ণের তরল যোজক টিস্যু। ধমনি, শিরা ও কৈশিকনালির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রক্ত অভ্যন্তরীণ পরিবহনে অংশ নেয়। উষ্ণ রক্তবাহী প্রাণীর দেহে রক্ত তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষা করে। রক্তের উপাদান দুটি- রক্তরস ও রক্তকণিকা। রক্তরস (Plasma) রক্তের তরল অংশ, এর রং ঈসৎ হলুদাভ। এর প্রায় 91-92% অংশ পানি এবং 8-9% অংশ জৈব ও অজৈব পদার্থ। এসব রক্তরসের বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন এবং বর্জ্য পদার্থ থাকে। রক্তকলিকা তিন ধরনের, যথা- লোহিত রপ্তকণিকা (Erythrocyte বা red blood corpuscles বা RBC), শ্বেত রক্তকণিকা (Leukocyte বা white blood corpuscles WBC) এবং অনুচক্রিকা (Thrombocytes Blood platelet)।
লোহিত রক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিন নামে একটি লৌহজাত যৌগ থাকে, যার জন্য রক্ত লাল হয়। হিমোগ্লোবিন অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি অক্সিহিমোগ্লোবিন যৌগ গঠন এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে অক্সিজেন পরিবহন করে।
শ্বেত রক্ত কণিকা জীবাণু ধ্বংস করে দেহের প্রকৃতিগত আত্মরক্ষায় অংশ নেয়।
অনুচক্রিকা রক্ত জমাট বাধায় অংশ নেয়।
লসিকা:
মানবদেহে বিভিন্ন টিস্যুর মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানে (Intercellular space) যে জলীয় পদার্থ জমা হয় তাকে লসিকা বলে। লসিকা ঈসৎ হলুদ বর্ণের তরল পদার্থ। এর মধ্যে কিছু রোগপ্রতিরোধী কোষ থাকে, এদের লসিকাকোষ (Lymphoid cell) বলে।
৪১। পেশী টিস্যু কাকে বলে ও কত প্রকার ?
ভ্রূণের মেসোডার্ম থেকে তৈরি সংকোচন ও প্রসারণশীল বিশেষ ধরনের টিস্যুকে পেশি টিস্যু বলে। এদের মাতৃকা প্রায় অনুপস্থিত। পেশিকোষগুলো সরু লম্বা এবং তন্তুময়। যেসব তন্তুতে আড়াআড়ি ডোরাকাটা থাকে, তাদের ডোরাকাটা পেশি (Striated muscle) এবং ডোরাবিহীন তন্তুকে মসৃণ পেশি (Smooth muscle) বলে। পেশিকোষ সংকোচন এবং প্রসারণের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ সঞ্চালন, চলন ও অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন ঘটায়। অবস্থান গঠন এবং কাজের ভিত্তিতে পেশি টিস্যু তিন ধরনের,
(i) ঐচ্ছিক পেশি
(ii) অনৈচ্ছিক পেশি এবং
(iii) হৃৎপেশি।
অভ্যন্তরীণ পরিবহন ঘটায়। অবস্থান, গঠন এবং কাজের ভিত্তিতে পেশি টিস্যু তিন ধরনের, ঐচ্ছিক পেশি, অনৈচ্ছিক পেশি এবং হৃদপেশি।
(i) ঐচ্ছিক পেশি (Voluntary) বা ডোরাকাটা পেশি (Striated muscle):
এই পেশি প্রাণীর ইচ্ছানুযায়ী সংকুচিত বা প্রসারিত হয়।
ঐচ্ছিক পেশিটিস্যুর কোষগুলো নলাকার, শাখাবিহীন ও আড়াআড়ি ডোরাযুক্ত হয়। এদের সাধারণত একাধিক নিউক্লিয়াস থাকে।
এই পেশি দ্রুত সংকুচিত এবং প্রসারিত হতে পারে। ঐচ্ছিক পেশি অস্থিতন্ত্রে সংলগ্ন থাকে। উদাহরণ: মানুষের হাত এবং পায়ের পেশি।
(ii) অনৈচ্ছিক পেশি (Involuntary muscle) মসৃণ পেশি (Smooth muscle):
এই পেশি টিস্যুর সংকোচন ও প্রসারণ প্রাণীর ইচ্ছাধীন নয়।
এ পেশির কোষগুলো মাকু আকৃতির। এদের গায়ে আড়াআড়ি দাগ থাকে না। এজন্য এ পেশিকে মসৃণ পেশি বলে।
মেরুদণ্ডী প্রাণীদের রক্তনালি, পৌষ্টিকনালি ইত্যাদির প্রাচীরে অনৈচ্ছিক পেশি থাকে।
অনৈচ্ছিক পেশি প্রধানত দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ্যাদির সঞ্চালনে অংশ নেয়। যেমন- খাদ্য হজম প্রক্রিয়ায় অন্ত্রের ক্রমসংকোচন।
(iii) কার্ডিয়াক পেশি বা হৃদপেশি (Cardiac muscle):
এ পেশি মেরুদন্ডী প্রাণীদের হৃৎপিন্ডের এক বিশেষ ধরণের অনৈচ্ছিক পেশি। এই টিস্যুর কোষগুলো নলাকৃতির (অনেকটা ঐচ্ছিক পেশির মতো), শাখান্বিত ও আড়াআড়ি দাগযুক্ত। এই টিস্যুর কোষগুলোর মধ্যে ইন্টারক্যালাটেড ডিস্ক (Intercalated disc) থাকে। এদের সংকোচন ও প্রসারণ প্রাণীর ইচ্ছাধীন নয়। অর্থাৎ কার্ডিয়াক পেশির গঠন ঐচ্ছিক পেশির মতো হলেও কাজ অনৈচ্ছিক পেশির মত। কার্ডিয়াক পেশির কোষগুলো শাখার মাধ্যমে পরস্পর যুক্ত থাকে। হৃদপিন্ডের সব কার্ডিয়াক পেশি সমন্বিতভাবে সাকুচিত ও প্রসারিত হয়। মানব ভ্রূণ সৃষ্টির একটা বিশেষ পর্যায় থেকে মৃত্যুর পূর্বমূহুর্ত পর্যন্ত হৃদপিন্ডের কার্ডিয়াক পেশি একটা নির্দিষ্ট গতিতে সংকুচিত ও প্রসারিত হয়ে দেহের মধ্যে রক্ত চলাচল প্রক্রিয়া সচল রাখে।
৪২। স্নায়ুকোষ বা নিউরন কাকে বলে ?
স্নায়ুতন্ত্রের গঠনমূলক ও কার্যকরী একককে নিউরন বা স্নায়ুকোষ বলে। মস্তিষ্ক কোটি কোটি স্নায়ুকোষ (নিউরন) দিয়ে তৈরি।